কেয়ামতের আলামত ও বর্তমান জামানা।
কেয়ামতের আলামত ও বর্তমান জামানা।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম "পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি"
কেয়ামতের পূর্বে কেয়ামতের নিকটবর্তিতার প্রমাণস্বরূপ যে আলামতগুলো প্রকাশ পাবে সেগুলোকে ছোট আলামত ও বড় আলামত এই পরিভাষাতে আখ্যায়িত করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছোট আলামতগুলো কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার অনেক আগেই প্রকাশিত হবে। এর মধ্যে কোন কোন আলামত ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে। কোন কোন আলামত নিঃশেষ হয়ে আবার পুনঃপ্রকাশ পাচ্ছে। কিছু আলামত প্রকাশিত হয়েছে এবং অব্যাহতভাবে প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে। আর কিছু আলামত এখনো প্রকাশ পায়নি। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সংবাদ অনুযায়ী সেগুলো অচিরেই প্রকাশ পাবে।আমি এখানে কেয়ামতের ছোট ছোট আলামত সমূহ উল্লেখ ও কিছু ভিডিও দিয়ে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি।ভুল-ত্রুটি হলে ছোট ভাই হিসেবে ক্ষমা করে দিবেন এবং কমেন্ট করে তা শুধরে দেয়ার অনুরোধ রইলো।আর ভাল লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।দুনিয়ার জীবন হল ক্ষণস্থায়ী, অচিরে কিয়ামত হবে এবং এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। ঈমান ও আমল অনুযায়ী মানুষের জন্য জান্নাত ও জাহান্নামের ফয়সালা হবে। প্রত্যেক মুসলিম কিয়ামতে বিশ্বাস রাখে। ঈমানের একটি শর্ত হল অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনা এবং আল্লাহ ও রাসূল (সা) থেকে বর্ণিত সকল বিষয়কে সত্য বলে বিশ্বাস করা। কুর’আনের অসংখ্য আয়াতে ও হাদিসে কেয়ামত ও কেয়ামতের নিদর্শন বলী বর্ণিত হয়েছে। এই নিদর্শনাবলী পাঠে রয়েছে বহুবীধ কল্যান। প্রথমত, হাদিসে বর্ণিত ভবিষ্যৎবাণীগুলো সত্য হতে দেখলে ঈমান দৃঢ় হয়, এবং মন আমলের প্রতি উৎসাহী হয়। দ্বিতীয়ত, ফিতনাকে চেনা সহজ হয় এবং আগত নতুন ফিতনার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া যায়।কেয়ামতের আলামত গুলো দু’প্রকার। ক্ষুদ্রতম আলামত ও বৃহত্তম আলামত। ক্ষুদ্রতম আলামতের সংখ্যা অসংখ্য।এর মধ্যে কিছু আলামত ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে, যেমন- রাসূল (সা)- এর আবির্ভাব, চন্দ্র বিদারণ, বিভিন্ন ভণ্ড নবী দাবীদারদের আগমন ইত্যাদি। আর বাকি আলামত প্রকাশ হচ্ছে এবং সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে।হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, “যখন রাষ্ট্রীয় মালকে ব্যক্তিগত সম্পদরূপে ব্যবহার করা হবে, আমানতকে খরচের বস্তু জ্ঞান করা হবে, যাকাতকে বোঝা ও জরিমানা মনে করা হবে, আল্লাহর জ্ঞান ছেড়ে পার্থিব জ্ঞান অর্জন করা হবে, মায়ের অবাধ্য হয়ে স্বামী স্ত্রীর আনুগত্য করবে, পিতাকে দূরে ঠেলে বন্ধু-বান্ধবকে আপন মনে করবে, মসজিদে শোরগোল করবে, ফাসেক ব্যক্তি গোত্রের সর্দার হবে, জাতির নিকৃষ্টতম ব্যক্তি তাদের নেতা হবে, ক্ষতির ভয়ে মানুষকে সম্মান করা হবে, হরেক রকমের বাদ্য-যন্ত্র ও নর্তকীদের প্রকাশ পাবে, মদ পান বেড়ে যাবে, উম্মতের পরবর্তী লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদেরকে গালমন্দ ও অভিশাপ দিবে- এই আলামতগুলো প্রকাশ হতে দেখলে, সে সময় তোমরা অপেক্ষা কর অগ্নিবায়ু, ভু-কম্পন, ভূমিধ্বস, রূপবিকৃতি, পাথর বৃষ্টি এবং ছিঁড়ে যাওয়া তাছবীহ-র দানার মত দ্রুত একের পর এক কেয়ামতের নিদর্শন সমূহের।” (তিরমিযী- ২২১১)উল্লেখিত সকল আলামত আজ আমাদের সমাজে ব্যাপকহারে পরিলক্ষিত হচ্ছে। মুসলিম উম্মাহর এক দল আজ বিধর্মীদের অন্ধ অনুসরণ করছে। তাদের সংস্কৃতি, ফ্যাশন, পোশাক-পরিচ্ছদ, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, আচার-আচরণ, মাদক সেবন, সুদ যুক্ত লেন-দেন ইত্যাদিতে মিশে একাকার হয়ে গেছে। রাসূল (সা) বলেছেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষন না আমার উম্মত পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট জাতির হুবহু অনুসরণ শুরু করবে। তারা যদি একহাত সামনে গিয়ে থাকে, তোমরাও যাবে। একগজ পেছনে গিয়ে থাকলে তোমরাও তাই করবে। এমনকি তারা যদি কোন সাপের গর্তে প্রবেশ করে থাকে, তোমরাও সাপের গর্তে প্রবেশ করবে।” ইহুদি-খ্রিষ্টানদের মত? জিজ্ঞেস করা হলে রাসূল (সা) বললেন, “তা না হলে আর কাদের মত?” (বুখারি, মুসলিম)উম্মতের একাংশ মদ পান,ব্যাভিচার,মেয়েদের সাথে মেলা মেশা,অশ্লীল নৃত্য ইত্যাদি সুস্পষ্ট হারাম বিষয়কে হালাল মনে করছে। রাসূল (সা) বলেছেন, “অবশ্যই আমার উম্মতের একদল মদ্যপানে লিপ্ত হবে। (ব্যবসার সুবিধার্থে) মদের নামকে তারা পরিবর্তন করে দেবে। তাদের মাথার উপর গান-বাজনা এবং নর্তকীদের নৃত্যানুষ্ঠান শোভা পাবে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেবেন। কতিপয়কে বানর-শুকরে পরিবর্তন করে দেবেন।” আরেক হাদিসে রয়েছে, “অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে একদল লোকের আবির্ভাব হবে, যারা মেয়েদের সাথে অবাধ মেলামেশা, রেশমী কাপড় পরিধান, মদ্য পান এবং গান-বাজনাকে হালাল মনে করবে।” (বুখারি-৫২৬৮, ইবনে মাজা-৪০২০)
হাদিসে জিব্রিল (আঃ) একটি জনপ্রিয় হাদিস। এখানে কেয়ামতের দুটি অন্যতম বড় আলামত বর্ণিত হয়েছে, এবং এই আলামত অন্যান্য আলামতের চাইতে বেশি গুরুত্ববহণ করে। জিব্রিল (আ) রাসূল (সা)-কে কেয়ামতের নিদর্শন জিজ্ঞাস করলে, জবাবে নবী (সা) বলেনঃ "ক্রীতদাসীরা তাদের মনিবকে প্রসব করবে এবং তুমি খালি পা ও নগ্নদেহ গরিব মেষ রাখালদের (অর্থাৎ আরব বেদুঈনদেরকে) সুউচ্চ দালান কোঠা নির্মাণ করতে দেখবে এবং তা নিয়ে গর্ব ও প্রতিযোগিতা করতে দেখবে।" (সহীহ মুসলিম)।প্রথম আলামতে বোঝানো হয়েছে, সন্তানরা মায়ের সাথে চাকরানীর মত আচরণ করবে।এবং দ্বিতীয় আলামত স্পষ্ট। অপর হাদিসে এসেছে- “দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত অভাবী লোকদেরকে নেতৃত্বের পদে দেখতে পেলে সেটাই হবে কেয়ামতের আলামত। দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত, অভাবী, নগ্নপদ ও নগ্নদেহ রাখাল বলতে আপনি কাদের বুঝাচ্ছেন? প্রশ্নের উত্তরে নাবিজী বলেন, ‘আরব জাতি।’ (মুসনাদে আহমাদ-২৯২৬) আরবরা গরীব ছিল, পরনে কাপড়ও থাকতো না কিন্তু তেল আবিস্কারের পর থেকে আরবীরা প্রচুর সম্পদ লাভ করে, এবং উঁচু উঁচু বিল্ডিং বানানোর প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে। এভাবেই তৈরি হয় বুরজ খালিফা, মক্কা ক্লক টাওয়ার, এবং সর্ব শেষ নির্মাণ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং কিংডম টাওয়ার।
সুইচ্চ বিল্ডিং নির্মাণের প্রতিযোগিতার পাশাপাশি মসজিদ সজ্জিতকরণ নিয়েও প্রতিযোগিতা হবে। রাসূল (সা) বলেন, “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষন না মানুষ মসজিদ (কারুকার্যকরণ) নিয়ে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে” অন্যত্র বলেছেন, “যখন তোমরা মসজিদগুলোকে ডিজাইন করবে, কুর’আনের আয়াতগুলোকে কারুকার্যমণ্ডিত করবে- তখন তোমাদের ধ্বংস কাছিয়ে যাবে।” (ইবনু আবি দাউদ)উক্ত বিষয়ে আরেকটি চমৎকার হাদিস রয়েছে। হাদিসটি সমাজের পাপের সাথে মসজিদের সুসজ্জিতকরণের একটি ইতিবাচক সম্পর্ক তুলে ধরছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা) বলেছেন, ‘যখন কোনো সম্প্রদায়ের পাপ বেড়ে যায়, তখনই সমাজের মসজিদগুলো সুসজ্জিত হয়। আর দাজ্জালের আবির্ভাবের সময় ঘনিয়ে না আসা পর্যন্ত মসজিদ গুলো সুসজ্জিত হবে না।’ (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিলফিতান খন্ডঃ ৪,পৃষ্ঠাঃ ৮১৯)সমাজে অশ্লীলতার প্রসার পাচ্ছে, এবং এমন এক নারী সম্প্রদায় তৈরি হয়েছে যারা কাপড় পরেও নগ্ন থাকে। তারা এমন কাপড় পরে যা তাদের নগ্নতাকে আরো বেশিকরে প্রকাশ করছে। বর্তমান সমাজে নারীদের অধিকাংশ পোশাক হল নগ্নতা ফুটিয়ে তোলার পোশাক। পাশাপাশি ব্যাপক আকারে ব্যাভিচার প্রকাশ পাচ্ছে, প্রকাশ্যে যৌনাচার চোখে পরছে।নবী করীম (সা) বলেছেন- “দুই প্রকার জাহান্নামী সম্প্রদায় এখনো আমি দেখিনিঃ ১. ষাঁঢ়ের লেজ সদৃশ চাবুক দিয়ে মানুষকে প্রহারকারী অত্যাচারী সম্প্রদায়। ২. কাপড় পড়বে কিন্তু তবুও নগ্ন থাকবে এমন নারী সম্প্রদায়। আবেদন সৃষ্টি করতে তাদের মাথাগুলো একপাশে ঝুকিয়ে দেবে। তাদের মাথাগুলো উটের কুঁজের মত উঁচু দেখাবে। এ দু’টি দলের কখনো জান্নাতে প্রবেশ তো দূরের কথা; জান্নাতের সুঘ্রাণও কপালে জুটবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ তো এত....এত.... দূর থেকেই অনুভব করা যায়।” (মুসলিম-৭৩৭৩/৫৭০৪)
অন্য হাদিসে এসেছে, “রাস্তা-ঘাটে খোলামেলা যৌনাচার চোখে পড়বে, বাঁধা দেয়ার কেউ থাকবে না। সে কালের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যক্তি সেই, যে সাহস করে বলবে- রাস্তা থেকে সরে গিয়ে একটু আড়ালে যদি এই কাজ করতে! সে কালে সে-ই এ কালে তোমাদের আবু বকর-উমর সদৃশ।” (মুস্তাদরাকে হাকিম-৮৫১৬)দ্বীনের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরজ কিন্তু সমাজের নতুন প্রজন্মের বিরাট অংশ সঠিক ভাবে নামাজ আদায় করতে জানে না। ধীরে ধীরে এই সমস্যা গুরুত্বর হচ্ছে। দ্বীনী বিষয়ে মূর্খতা হল কেয়ামতের নিদর্শন। নাবী করিম (সা) বলেন, “নিশ্চয় কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে (ইসলামের) জ্ঞান উঠে যাবে এবং মূর্খতা ছেয়ে যাবে।” অন্যত্র বলেন, “এমন এক কাল আসবে, যখন মানুষ জানবে না- নামায কী, রোযা কী, সাদাকা কী?” (বুখারি, মুসলিম, তাবারানী)। আরেকটি আলামত হল কুর’আন পাঠ করে দুনিয়া আশা করা। নাবী করিম (সা) বলেন, “অচিরেই একদল লোকের আবির্ভাব হবে, যারা সুমধুর কণ্ঠে কুর’আন পড়ার চেষ্টা করবে। আখিরাতের পরিবর্তে দুনিয়াতেই তারা এর বিনিময় আশা করবে।” (আবু দাউদ- ৮৩০)ব্যবসা-বানিজ্যর ব্যাপক হারে প্রসারতা, নারীদের ব্যবসায়ে অংশগ্রহন, সিন্ডিকেট, আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকরণ হল কেয়ামতের অন্যতম আলামত। রাসূল (সা) বলেন, “কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে ব্যক্তি বিশেষে সালাম দেয়া হবে, বাণিজ্য ব্যাপক হয়ে যাবে এমনকি ব্যবসায় স্ত্রী স্বামীকে সহযোগিতা করবে, আত্নীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হবে (তাদের খোঁজখবর নেয়ার সময় থাকবে না), মিথ্যা সাক্ষ্য-মহামারির আকার ধারণ করবে, সত্য সাক্ষ্য গুম করা হবে, এবং লেখালেখি বেশি হতে থাকবে” (মুসনাদে আহমদ- ৩৮৭০)কেয়ামত যত নিকটবর্তী হবে সংঘাত ও হত্যাকান্ডের সংখ্যা তত বাড়তে থাকবে। এমনকি নিহত ব্যক্তি জানবে না কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে, আর হত্যাকারীও জানবে না কেন সে হত্যা করছে। হাদিসে এসেছে, “সময় দ্রুত অতিবাহিত হবে, মানুষের আমল কমে যাবে, অন্তরে কার্পণ্যতা সৃষ্টি হবে, এবং অধিক হারে সংঘাত (হত্যাযজ্ঞ) ঘটতে থাকবে।” আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ম্যাস ডিস্ট্রাকশন ওয়েপন ব্যবহার করে কয়েক সেকেন্ড হাজারো মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। ইতিহাসের সকল হত্যাকান্ডের যোগফলের চাইতে দুই বিশ্ব যুদ্ধ ও বর্তমান যুদ্ধে নিহত হওয়া লোকের সংখ্যা বেশি। সবচাইতে বেশি নিহত হচ্ছে নিরীহ মুসলিমরা। বার্মা, কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়ামান, আফগানিস্তান সহ বিভিন্ন যায়গায় প্রতিনিয়ত মুসলিমরা বিধর্মীর হাতে নিহত হচ্ছে। হাদিসে এসেছে-আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত,রাসূল (সা) বলেছেন,‘শীঘ্রই মানুষ তোমাদেরকে আক্রমন করার জন্য আহবান করতে থাকবে, যেভাবে মানুষ তাদের সাথে খাবার খাওয়ার জন্য একে-অন্যকে আহবান করে।’ জিজ্ঞেস করা হলো,‘তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হবো?’ তিনি বললেন,‘না, বরং তোমরা সংখ্যায় হবে অগণিত কিন্তু তোমরা সমুদ্রের ফেনার মতো হবে, যাকে সহজেই সামুদ্রিক স্রোত বয়ে নিয়ে যায় এবং আল্লাহ তোমাদের শত্রুর অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দিবেন এবং তোমাদের অন্তরে আল-ওয়াহ্হান ঢুকিয়ে দিবেন।’ জিজ্ঞেস করা হলো,‘হে আল্লাহর রাসূল (সা), আল–ওয়াহ্হান কি?’ তিনি বললেন, ‘দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।’ (মুসনাদে আহমদ, সুনানে আবু দাউদ)হারাম উপার্জন ও সুদ মহামারির আকার ধারণ করবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক আছে বলে মানুষ মনে করবে না। হারাম-হালালের চিন্তা না করে, দেদারসে ব্যবসা করবে। “মানুষের উপর এমন যুগ অবশ্যই আসবে যখন মানুষ পরোয়া করবে না যে কিভাবে সে মাল-সম্পদ অর্জন করছে হালাল নাকি হারাম উৎস থেকে।” (সহীহ বুখারী ৪:১৯৪৮) এবং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সুদ পৌঁছে যাবে। আল্লাহ্র রাসূল (সা) বলেছেন, ‘মানুষের জীবনে এমন একটি যুগ আসবে, যখন তারা সুদ খাবে’। বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে নবীজি (সা)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, সমস্ত মানুষ (সুদ খাবে)? উত্তরে তিনি বললেন, “তাদের যে লোক সুদ খাবে না, সুদের ধূলা তাকেও গ্রাস করবে।” [সুনানে আবু দাউদ, খণ্ডঃ ৩, পৃষ্টাঃ ২৪৩] আমরা যেন কেয়ামতকে জোড় করে টেনে আনতে চাচ্ছি, সত্যনবী বলে গেছেন, “এমন এক সময় আসবে, যখন মানুষকে হারাম কিংবা বিদায়- কোন একটিকে বেছে নিতে বাধ্য করা হবে।” বর্তমানে এটি হচ্ছে, কোম্পানি বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কোন হারাম- সুদি লেনদেন, ঘুষ, পর্দা করতে না পারা, মদ বা মাদক সেবন করা, অনৈতিক ও মিথ্যার আশ্রয় নেয়া প্রভৃতি হারাম কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাদের কথা স্পষ্ট- হারাম কাজ কর, নয়ত বিদায় নাও। হাদিসের বাকি অংশে রাসূল (সা) আমাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন, “তোমরা যারা সেদিন বেঁচে থাকো, বিদায়কে হারামের উপর প্রাধান্য দিয়ো।” (মুসনাদে আহমদ)ইসলামের মৌলিক সিড়িগুলো এক এক করে ভেঙ্গে পড়বে। তন্মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছে কোরআনের শাসন ও সর্বশেষ নামাজ। বর্তমানে বিশ্বের ১০% মুসলিমও নামাজ পড়ে না। নবী করীম (সা) বলেন- “অবশ্যই ইসলামের স্তম্ভগুলো একে একে ভেঙ্গে পড়বে। একটি ভেঙ্গে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষ অপর স্তম্ভকে ধরে ফেলবে। সর্বপ্রথম ভাঙবে- কোরআনের শাসন। সর্বশেষে- নামায।” (মুসনাদে আহমদ-২২২১৪, তাবারানী-৭৪৮৬)উপরিউক্ত সকল আলামতের ব্যাপকতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুসলিম উম্মাহকে একের পর এক নতুন ফিতনা গ্রাস করবে। কিন্তু মুসলিমরা হতাশ হবে না, বরং তারা আশায় থাকবে। আহলে বাইতের সে-ই সদস্যের যার আগমনের বার্তা রাসূল (সা) দিয়েছেন। রাসূল (সা) বলেছেন, “পৃথিবীর জীবন সায়াহ্নে যদি একটি মাত্র দিন অবশিষ্ট থাকে, তবে সে-ই দিনটিকে আল্লাহ দীর্ঘ করে আমার পরিবারস্থ একজন ব্যক্তিকে প্রেরণ করে ছাড়বেন, তার নাম আমার নাম এবং পিতার নাম আমার পিতার নামের সদৃশ হবে।” (তিরমিযি-২২৩০, আবু দাউদ- ৪২৮৪) ইমাম মাহদির আগমন হল এক অন্যতম আলামত। তিনি আবারো মুসলিমদের এক পতাকার তলে জড়ো করবেন। তাকে সাহায্য করবে খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল। তার নেতৃত্বে মুসলিমরা যুদ্ধ করবে। এক ভয়াবহ যুদ্ধ হবে, হাদিসে এই যুদ্ধকে বলা হয়েছে মালহামা। যুদ্ধে প্রতি ১০০ জনে ৯৯ জন মারা যাবে, মুসলিমরা পুনরায় কনস্টান্টিনোপল জয় করবে। হাদিসে এসেছে- “জেরুজালেমের উন্নতি মদিনার বিনাশের কারণ হবে, মদিনার বিনাশ বিশ্বযুদ্ধের ( মালহামা র) সূচনা করবে। বিশ্বযুদ্ধের সূচনা মানে কনস্টান্টিনোপল বিজয় এবং
কনস্টান্টিনোপল বিজয় মানে দাজ্জালের আত্নপ্রকাশ।” (আবু দাউদ- ৪২৯৬)দাজ্জাল হল আদম সন্তান। মানুষ হলেও তাকে আল্লাহ অনেক ক্ষমতা দেয়েছেন, যাতে সে দুর্বলদের ঈমানহারা করতে পারে। দাজ্জাল হলা মহাফিতনা। আদম (আঃ) থেকে কেয়ামত অবধি দাজ্জাল হল সবচাইতে বড় ফিতনা। সে এমন অলৌকিক বিষয় দেখাবে যা দেখে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে। দাজ্জাল প্রথমে নিজেকে নবী ( মসীহ) ও পরে আল্লাহ হিসেবে দাবী করবে। ইহুদিরা তাকে সত্য মসীহা জ্ঞান করবে। দাজ্জাল পুরো দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াবে কিন্তু মক্কা ও মদিনায় সে প্রবেশ করতে পারবে না। সেখানে ফেরেশতারা পাহাড়া দিবে। সে মৃত মানুষ ও জন্তুকে জীবিত করবে। তার ইচ্ছায় বৃষ্টি হবে। তার দুই পাশে থাকবে আগুন ও পানি তথা জান্নাত ও জাহান্নাম। যে তাকে বিশ্বাস করবে না তাকে সে আগুনে নিক্ষেপ করবে প্রকৃতপক্ষে সেটা মুমিনদের জন্য জান্নাত হবে। তার ডান চোখ হবে অন্ধ। তার কপালে লেখা থাকবে কাফির। সে দুনিয়াতে ৪০ দিন থাকবে, তার প্রথম দিন হবে আমাদের এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন হবে এক মাসের, তৃতীয় দিন হবে এক সপ্তাহের সমান, এবং বাকি দিন গুলো স্বাভাবিক দিনের মতই হবে। সে ইমাম মাহদিকে তাড়া করবে, মুসলিমরা তখন সিরিয়ার একটি মসজিদে অবস্থান নিবে, দাজ্জালের সেনা বাহিরে অবস্থান নিবে। এক সময় সত্য মসিহা ইসা (আ) আকাশ থেকে নেমে আসবেন, এবং ইমাম মাহদির ইমামতিতে নামাজ আদায় করবেন। পরে দরজাখুলে দেয়ার নির্দেশ আসবে, দাজ্জাল তাকে দেখে পালাতে চাইবে তিনি তাকে হত্যা করবেন। দাজ্জালের বিনাশের সাথে সাথে ইহুদিদের নিধন শুরু হবে। এটাই হবে শেষ যুদ্ধ। তখন পাথর ও গাছ কথা বলবে- “হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদি লুকিয়ে আছে, একে হত্যা কর।”একসময় খবর আসবে ইয়াজুজ মাজুজ বের হয়ে আসছে। ইসা (আ) মুসলিমদের নিয়ে এক পাহাড়ের উপরে অবস্থান নিবেন। আল্লাহ মহামারি ও বিশালাকার পাখি পাঠিয়ে তাদের হত্যা করে দুনিয়াকে তাদের ফ্যাসাদ থেকে রক্ষা করবেন। এভাবে কয়েক যুগ অতিবাহিত হবে। আল্লাহ এক ঠান্ডা বাতাস পাঠাবেন যা প্রত্যেক ইমানদারের রূহ কবজ করে নিবে। এরপরে পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠবে, এটার অর্থ হল এখন থেকে আর কারো তাওবা কবুল করা হবে না। এর পরেই হবে কেয়ামত। ইসরাফিল (আঃ) শিঙ্গায় ফুৎকার দিবেন।
হযরত হুযায়ফা (রা) বলেন, “আমরা পরস্পর আলাপরত ছিলাম, নাবী করিম (সা) এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আলোচনা করছিলে? সবাই বলল, কেয়ামত প্রসঙ্গে। তখন তিনি বললেন, “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষন না তোমরা দশটি (বৃহত্তম) আলামত দেখতে পাও- ধোঁয়া, দাজ্জাল, অদ্ভুত প্রাণী, পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, ইসা (আ) এর প্রত্যাগমণ, ইয়াজুজ-মাজুজের উদ্ভব, তিনটি ভূমিধ্বস-প্রাচ্যে, পাশ্চাত্যে ও আরব উপদ্বীপে, এবং সর্বশেষ ইয়েমেন থেকে উত্থিত হাশরের ময়দানের দিকে তাড়নাকারী বিশাল অগ্নি।” (মুসলিম)১৪০০ বছর আগে রাসূল (সা)-এর বর্ণিত প্রতিটি ভবিষ্যতবাণী সত্য হচ্ছে। অবশ্যই তার প্রতিটি কথা সত্য। সংশয়বাদীদের নিকট এই ভবিষ্যতবাণী গুলো ওপেন চ্যালেঞ্জ করছে। কি করে একজন মানুষ এত বছর পূর্বে, আজকের সমাজের হুবহু বর্ণনা দিতে পারলেন?- এটাই প্রমাণ তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত সত্য নবী। তিনি বলে গেছেন, সন্তানরা উগ্র হয়ে যাবে, স্যাটেলাইট টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদির আবিস্কার হবে। তিনি বলেছেন, “অচিরেই আকাশ থেকে অনিষ্টকর বস্তু বর্ষিত হবে, এমনকি তা জনশূন্য সুদূর মরু প্রান্তরেও পৌঁছবে” আজ রেডিও, ডিস টিভি মরুভূমি ও সাগরের মাঝে পৌঁছে গেছে। তিনি বলেছেন, চাপাবাজি করে মানুষ টাকা আয় করবে, সমাজের নিকৃষ্ট ব্যক্তিরা বাজার দখল করবে, সমকামিতা ও লেসবিয়ানিজম বিস্তার করবে, নারীদের চরিত্রকে ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন মুভমেন্ট হবে, নতুন নতুন বাদ্যযন্ত্রের উদ্ভাবন হবে, এমনকি তিনি বলেছেন মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট মানুষের মাথায় থাকবে- অর্থাৎ বর্তমান হ্যাডফোন, জারজ শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে- আমেরিকায় মোট জন্মাহারের শতকরা ৫০ ভাগ হল জারজ শিশু, লাঠি ও জুতার ফিতা মানুষের সাথে কথা বলবে, মালিকের অবর্তমানে বাসায় কি কি হয়েছে তা বর্ণনা করবে- এখানে সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়েব ক্যাম, বিভিন্ন গেজেট ও স্মার্ট ফোন এর ইঙ্গিত করা হচ্ছে, মানুষ কাপড় পরেও নগ্ন মনে হবে, মায়ের অবাধ্য হয়ে স্ত্রীর আনুগত্য করবে, প্রকাশ্যে যৌনাচার হবে ইত্যাদি সব কিছু ১৪শ বছর পূর্বে কি করে তিনি বলে গেছেন? অবশ্যই তিনি আল্লাহর রাসূল। তার প্রতিটি বাণী সত্য- আজ আমরা নিজ চোখে এর প্রমাণ দেখছি। এগুলো হল আল্লাহর নিদর্শন , তিনি চান বান্দারা তাওবা করে ফিরে আসুক। আলামত জানার পরেও কি আমরা ঈমানহারা বা দুর্বল ঈমান রেখে এবং বদআমল করেই যাব? এই আলামত আমাদের ঘুম ভাঙানোর জন্য যথেষ্ট নয়? আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন, ফিতনাকে ফিতনা হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা) বলেন, “অন্ধকার রাত্রির ন্যায় ক্রমাগত ফিতনা আসার আগে-ই যা আমল করার করে ফেলো। মানুষ তখন সকালে মুমিন থাকবে, বিকালে কাফির হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন থাকবে, সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার তুচ্ছ লাভের আশায় নিজের ঈমানকে সে বিক্রি করে দেবে।” (মুসলিম- ৩২৮)
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম "পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি"
কেয়ামতের পূর্বে কেয়ামতের নিকটবর্তিতার প্রমাণস্বরূপ যে আলামতগুলো প্রকাশ পাবে সেগুলোকে ছোট আলামত ও বড় আলামত এই পরিভাষাতে আখ্যায়িত করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছোট আলামতগুলো কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার অনেক আগেই প্রকাশিত হবে। এর মধ্যে কোন কোন আলামত ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে। কোন কোন আলামত নিঃশেষ হয়ে আবার পুনঃপ্রকাশ পাচ্ছে। কিছু আলামত প্রকাশিত হয়েছে এবং অব্যাহতভাবে প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে। আর কিছু আলামত এখনো প্রকাশ পায়নি। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সংবাদ অনুযায়ী সেগুলো অচিরেই প্রকাশ পাবে।আমি এখানে কেয়ামতের ছোট ছোট আলামত সমূহ উল্লেখ ও কিছু ভিডিও দিয়ে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি।ভুল-ত্রুটি হলে ছোট ভাই হিসেবে ক্ষমা করে দিবেন এবং কমেন্ট করে তা শুধরে দেয়ার অনুরোধ রইলো।আর ভাল লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।দুনিয়ার জীবন হল ক্ষণস্থায়ী, অচিরে কিয়ামত হবে এবং এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। ঈমান ও আমল অনুযায়ী মানুষের জন্য জান্নাত ও জাহান্নামের ফয়সালা হবে। প্রত্যেক মুসলিম কিয়ামতে বিশ্বাস রাখে। ঈমানের একটি শর্ত হল অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনা এবং আল্লাহ ও রাসূল (সা) থেকে বর্ণিত সকল বিষয়কে সত্য বলে বিশ্বাস করা। কুর’আনের অসংখ্য আয়াতে ও হাদিসে কেয়ামত ও কেয়ামতের নিদর্শন বলী বর্ণিত হয়েছে। এই নিদর্শনাবলী পাঠে রয়েছে বহুবীধ কল্যান। প্রথমত, হাদিসে বর্ণিত ভবিষ্যৎবাণীগুলো সত্য হতে দেখলে ঈমান দৃঢ় হয়, এবং মন আমলের প্রতি উৎসাহী হয়। দ্বিতীয়ত, ফিতনাকে চেনা সহজ হয় এবং আগত নতুন ফিতনার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া যায়।কেয়ামতের আলামত গুলো দু’প্রকার। ক্ষুদ্রতম আলামত ও বৃহত্তম আলামত। ক্ষুদ্রতম আলামতের সংখ্যা অসংখ্য।এর মধ্যে কিছু আলামত ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে, যেমন- রাসূল (সা)- এর আবির্ভাব, চন্দ্র বিদারণ, বিভিন্ন ভণ্ড নবী দাবীদারদের আগমন ইত্যাদি। আর বাকি আলামত প্রকাশ হচ্ছে এবং সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে।হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, “যখন রাষ্ট্রীয় মালকে ব্যক্তিগত সম্পদরূপে ব্যবহার করা হবে, আমানতকে খরচের বস্তু জ্ঞান করা হবে, যাকাতকে বোঝা ও জরিমানা মনে করা হবে, আল্লাহর জ্ঞান ছেড়ে পার্থিব জ্ঞান অর্জন করা হবে, মায়ের অবাধ্য হয়ে স্বামী স্ত্রীর আনুগত্য করবে, পিতাকে দূরে ঠেলে বন্ধু-বান্ধবকে আপন মনে করবে, মসজিদে শোরগোল করবে, ফাসেক ব্যক্তি গোত্রের সর্দার হবে, জাতির নিকৃষ্টতম ব্যক্তি তাদের নেতা হবে, ক্ষতির ভয়ে মানুষকে সম্মান করা হবে, হরেক রকমের বাদ্য-যন্ত্র ও নর্তকীদের প্রকাশ পাবে, মদ পান বেড়ে যাবে, উম্মতের পরবর্তী লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদেরকে গালমন্দ ও অভিশাপ দিবে- এই আলামতগুলো প্রকাশ হতে দেখলে, সে সময় তোমরা অপেক্ষা কর অগ্নিবায়ু, ভু-কম্পন, ভূমিধ্বস, রূপবিকৃতি, পাথর বৃষ্টি এবং ছিঁড়ে যাওয়া তাছবীহ-র দানার মত দ্রুত একের পর এক কেয়ামতের নিদর্শন সমূহের।” (তিরমিযী- ২২১১)উল্লেখিত সকল আলামত আজ আমাদের সমাজে ব্যাপকহারে পরিলক্ষিত হচ্ছে। মুসলিম উম্মাহর এক দল আজ বিধর্মীদের অন্ধ অনুসরণ করছে। তাদের সংস্কৃতি, ফ্যাশন, পোশাক-পরিচ্ছদ, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, আচার-আচরণ, মাদক সেবন, সুদ যুক্ত লেন-দেন ইত্যাদিতে মিশে একাকার হয়ে গেছে। রাসূল (সা) বলেছেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষন না আমার উম্মত পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট জাতির হুবহু অনুসরণ শুরু করবে। তারা যদি একহাত সামনে গিয়ে থাকে, তোমরাও যাবে। একগজ পেছনে গিয়ে থাকলে তোমরাও তাই করবে। এমনকি তারা যদি কোন সাপের গর্তে প্রবেশ করে থাকে, তোমরাও সাপের গর্তে প্রবেশ করবে।” ইহুদি-খ্রিষ্টানদের মত? জিজ্ঞেস করা হলে রাসূল (সা) বললেন, “তা না হলে আর কাদের মত?” (বুখারি, মুসলিম)উম্মতের একাংশ মদ পান,ব্যাভিচার,মেয়েদের সাথে মেলা মেশা,অশ্লীল নৃত্য ইত্যাদি সুস্পষ্ট হারাম বিষয়কে হালাল মনে করছে। রাসূল (সা) বলেছেন, “অবশ্যই আমার উম্মতের একদল মদ্যপানে লিপ্ত হবে। (ব্যবসার সুবিধার্থে) মদের নামকে তারা পরিবর্তন করে দেবে। তাদের মাথার উপর গান-বাজনা এবং নর্তকীদের নৃত্যানুষ্ঠান শোভা পাবে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেবেন। কতিপয়কে বানর-শুকরে পরিবর্তন করে দেবেন।” আরেক হাদিসে রয়েছে, “অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে একদল লোকের আবির্ভাব হবে, যারা মেয়েদের সাথে অবাধ মেলামেশা, রেশমী কাপড় পরিধান, মদ্য পান এবং গান-বাজনাকে হালাল মনে করবে।” (বুখারি-৫২৬৮, ইবনে মাজা-৪০২০)
হাদিসে জিব্রিল (আঃ) একটি জনপ্রিয় হাদিস। এখানে কেয়ামতের দুটি অন্যতম বড় আলামত বর্ণিত হয়েছে, এবং এই আলামত অন্যান্য আলামতের চাইতে বেশি গুরুত্ববহণ করে। জিব্রিল (আ) রাসূল (সা)-কে কেয়ামতের নিদর্শন জিজ্ঞাস করলে, জবাবে নবী (সা) বলেনঃ "ক্রীতদাসীরা তাদের মনিবকে প্রসব করবে এবং তুমি খালি পা ও নগ্নদেহ গরিব মেষ রাখালদের (অর্থাৎ আরব বেদুঈনদেরকে) সুউচ্চ দালান কোঠা নির্মাণ করতে দেখবে এবং তা নিয়ে গর্ব ও প্রতিযোগিতা করতে দেখবে।" (সহীহ মুসলিম)।প্রথম আলামতে বোঝানো হয়েছে, সন্তানরা মায়ের সাথে চাকরানীর মত আচরণ করবে।এবং দ্বিতীয় আলামত স্পষ্ট। অপর হাদিসে এসেছে- “দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত অভাবী লোকদেরকে নেতৃত্বের পদে দেখতে পেলে সেটাই হবে কেয়ামতের আলামত। দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত, অভাবী, নগ্নপদ ও নগ্নদেহ রাখাল বলতে আপনি কাদের বুঝাচ্ছেন? প্রশ্নের উত্তরে নাবিজী বলেন, ‘আরব জাতি।’ (মুসনাদে আহমাদ-২৯২৬) আরবরা গরীব ছিল, পরনে কাপড়ও থাকতো না কিন্তু তেল আবিস্কারের পর থেকে আরবীরা প্রচুর সম্পদ লাভ করে, এবং উঁচু উঁচু বিল্ডিং বানানোর প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে। এভাবেই তৈরি হয় বুরজ খালিফা, মক্কা ক্লক টাওয়ার, এবং সর্ব শেষ নির্মাণ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং কিংডম টাওয়ার।
সুইচ্চ বিল্ডিং নির্মাণের প্রতিযোগিতার পাশাপাশি মসজিদ সজ্জিতকরণ নিয়েও প্রতিযোগিতা হবে। রাসূল (সা) বলেন, “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষন না মানুষ মসজিদ (কারুকার্যকরণ) নিয়ে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে” অন্যত্র বলেছেন, “যখন তোমরা মসজিদগুলোকে ডিজাইন করবে, কুর’আনের আয়াতগুলোকে কারুকার্যমণ্ডিত করবে- তখন তোমাদের ধ্বংস কাছিয়ে যাবে।” (ইবনু আবি দাউদ)উক্ত বিষয়ে আরেকটি চমৎকার হাদিস রয়েছে। হাদিসটি সমাজের পাপের সাথে মসজিদের সুসজ্জিতকরণের একটি ইতিবাচক সম্পর্ক তুলে ধরছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা) বলেছেন, ‘যখন কোনো সম্প্রদায়ের পাপ বেড়ে যায়, তখনই সমাজের মসজিদগুলো সুসজ্জিত হয়। আর দাজ্জালের আবির্ভাবের সময় ঘনিয়ে না আসা পর্যন্ত মসজিদ গুলো সুসজ্জিত হবে না।’ (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিলফিতান খন্ডঃ ৪,পৃষ্ঠাঃ ৮১৯)সমাজে অশ্লীলতার প্রসার পাচ্ছে, এবং এমন এক নারী সম্প্রদায় তৈরি হয়েছে যারা কাপড় পরেও নগ্ন থাকে। তারা এমন কাপড় পরে যা তাদের নগ্নতাকে আরো বেশিকরে প্রকাশ করছে। বর্তমান সমাজে নারীদের অধিকাংশ পোশাক হল নগ্নতা ফুটিয়ে তোলার পোশাক। পাশাপাশি ব্যাপক আকারে ব্যাভিচার প্রকাশ পাচ্ছে, প্রকাশ্যে যৌনাচার চোখে পরছে।নবী করীম (সা) বলেছেন- “দুই প্রকার জাহান্নামী সম্প্রদায় এখনো আমি দেখিনিঃ ১. ষাঁঢ়ের লেজ সদৃশ চাবুক দিয়ে মানুষকে প্রহারকারী অত্যাচারী সম্প্রদায়। ২. কাপড় পড়বে কিন্তু তবুও নগ্ন থাকবে এমন নারী সম্প্রদায়। আবেদন সৃষ্টি করতে তাদের মাথাগুলো একপাশে ঝুকিয়ে দেবে। তাদের মাথাগুলো উটের কুঁজের মত উঁচু দেখাবে। এ দু’টি দলের কখনো জান্নাতে প্রবেশ তো দূরের কথা; জান্নাতের সুঘ্রাণও কপালে জুটবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ তো এত....এত.... দূর থেকেই অনুভব করা যায়।” (মুসলিম-৭৩৭৩/৫৭০৪)
অন্য হাদিসে এসেছে, “রাস্তা-ঘাটে খোলামেলা যৌনাচার চোখে পড়বে, বাঁধা দেয়ার কেউ থাকবে না। সে কালের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যক্তি সেই, যে সাহস করে বলবে- রাস্তা থেকে সরে গিয়ে একটু আড়ালে যদি এই কাজ করতে! সে কালে সে-ই এ কালে তোমাদের আবু বকর-উমর সদৃশ।” (মুস্তাদরাকে হাকিম-৮৫১৬)দ্বীনের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরজ কিন্তু সমাজের নতুন প্রজন্মের বিরাট অংশ সঠিক ভাবে নামাজ আদায় করতে জানে না। ধীরে ধীরে এই সমস্যা গুরুত্বর হচ্ছে। দ্বীনী বিষয়ে মূর্খতা হল কেয়ামতের নিদর্শন। নাবী করিম (সা) বলেন, “নিশ্চয় কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে (ইসলামের) জ্ঞান উঠে যাবে এবং মূর্খতা ছেয়ে যাবে।” অন্যত্র বলেন, “এমন এক কাল আসবে, যখন মানুষ জানবে না- নামায কী, রোযা কী, সাদাকা কী?” (বুখারি, মুসলিম, তাবারানী)। আরেকটি আলামত হল কুর’আন পাঠ করে দুনিয়া আশা করা। নাবী করিম (সা) বলেন, “অচিরেই একদল লোকের আবির্ভাব হবে, যারা সুমধুর কণ্ঠে কুর’আন পড়ার চেষ্টা করবে। আখিরাতের পরিবর্তে দুনিয়াতেই তারা এর বিনিময় আশা করবে।” (আবু দাউদ- ৮৩০)ব্যবসা-বানিজ্যর ব্যাপক হারে প্রসারতা, নারীদের ব্যবসায়ে অংশগ্রহন, সিন্ডিকেট, আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকরণ হল কেয়ামতের অন্যতম আলামত। রাসূল (সা) বলেন, “কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে ব্যক্তি বিশেষে সালাম দেয়া হবে, বাণিজ্য ব্যাপক হয়ে যাবে এমনকি ব্যবসায় স্ত্রী স্বামীকে সহযোগিতা করবে, আত্নীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হবে (তাদের খোঁজখবর নেয়ার সময় থাকবে না), মিথ্যা সাক্ষ্য-মহামারির আকার ধারণ করবে, সত্য সাক্ষ্য গুম করা হবে, এবং লেখালেখি বেশি হতে থাকবে” (মুসনাদে আহমদ- ৩৮৭০)কেয়ামত যত নিকটবর্তী হবে সংঘাত ও হত্যাকান্ডের সংখ্যা তত বাড়তে থাকবে। এমনকি নিহত ব্যক্তি জানবে না কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে, আর হত্যাকারীও জানবে না কেন সে হত্যা করছে। হাদিসে এসেছে, “সময় দ্রুত অতিবাহিত হবে, মানুষের আমল কমে যাবে, অন্তরে কার্পণ্যতা সৃষ্টি হবে, এবং অধিক হারে সংঘাত (হত্যাযজ্ঞ) ঘটতে থাকবে।” আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ম্যাস ডিস্ট্রাকশন ওয়েপন ব্যবহার করে কয়েক সেকেন্ড হাজারো মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। ইতিহাসের সকল হত্যাকান্ডের যোগফলের চাইতে দুই বিশ্ব যুদ্ধ ও বর্তমান যুদ্ধে নিহত হওয়া লোকের সংখ্যা বেশি। সবচাইতে বেশি নিহত হচ্ছে নিরীহ মুসলিমরা। বার্মা, কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়ামান, আফগানিস্তান সহ বিভিন্ন যায়গায় প্রতিনিয়ত মুসলিমরা বিধর্মীর হাতে নিহত হচ্ছে। হাদিসে এসেছে-আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত,রাসূল (সা) বলেছেন,‘শীঘ্রই মানুষ তোমাদেরকে আক্রমন করার জন্য আহবান করতে থাকবে, যেভাবে মানুষ তাদের সাথে খাবার খাওয়ার জন্য একে-অন্যকে আহবান করে।’ জিজ্ঞেস করা হলো,‘তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হবো?’ তিনি বললেন,‘না, বরং তোমরা সংখ্যায় হবে অগণিত কিন্তু তোমরা সমুদ্রের ফেনার মতো হবে, যাকে সহজেই সামুদ্রিক স্রোত বয়ে নিয়ে যায় এবং আল্লাহ তোমাদের শত্রুর অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দিবেন এবং তোমাদের অন্তরে আল-ওয়াহ্হান ঢুকিয়ে দিবেন।’ জিজ্ঞেস করা হলো,‘হে আল্লাহর রাসূল (সা), আল–ওয়াহ্হান কি?’ তিনি বললেন, ‘দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।’ (মুসনাদে আহমদ, সুনানে আবু দাউদ)হারাম উপার্জন ও সুদ মহামারির আকার ধারণ করবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক আছে বলে মানুষ মনে করবে না। হারাম-হালালের চিন্তা না করে, দেদারসে ব্যবসা করবে। “মানুষের উপর এমন যুগ অবশ্যই আসবে যখন মানুষ পরোয়া করবে না যে কিভাবে সে মাল-সম্পদ অর্জন করছে হালাল নাকি হারাম উৎস থেকে।” (সহীহ বুখারী ৪:১৯৪৮) এবং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সুদ পৌঁছে যাবে। আল্লাহ্র রাসূল (সা) বলেছেন, ‘মানুষের জীবনে এমন একটি যুগ আসবে, যখন তারা সুদ খাবে’। বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে নবীজি (সা)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, সমস্ত মানুষ (সুদ খাবে)? উত্তরে তিনি বললেন, “তাদের যে লোক সুদ খাবে না, সুদের ধূলা তাকেও গ্রাস করবে।” [সুনানে আবু দাউদ, খণ্ডঃ ৩, পৃষ্টাঃ ২৪৩] আমরা যেন কেয়ামতকে জোড় করে টেনে আনতে চাচ্ছি, সত্যনবী বলে গেছেন, “এমন এক সময় আসবে, যখন মানুষকে হারাম কিংবা বিদায়- কোন একটিকে বেছে নিতে বাধ্য করা হবে।” বর্তমানে এটি হচ্ছে, কোম্পানি বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কোন হারাম- সুদি লেনদেন, ঘুষ, পর্দা করতে না পারা, মদ বা মাদক সেবন করা, অনৈতিক ও মিথ্যার আশ্রয় নেয়া প্রভৃতি হারাম কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাদের কথা স্পষ্ট- হারাম কাজ কর, নয়ত বিদায় নাও। হাদিসের বাকি অংশে রাসূল (সা) আমাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন, “তোমরা যারা সেদিন বেঁচে থাকো, বিদায়কে হারামের উপর প্রাধান্য দিয়ো।” (মুসনাদে আহমদ)ইসলামের মৌলিক সিড়িগুলো এক এক করে ভেঙ্গে পড়বে। তন্মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছে কোরআনের শাসন ও সর্বশেষ নামাজ। বর্তমানে বিশ্বের ১০% মুসলিমও নামাজ পড়ে না। নবী করীম (সা) বলেন- “অবশ্যই ইসলামের স্তম্ভগুলো একে একে ভেঙ্গে পড়বে। একটি ভেঙ্গে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষ অপর স্তম্ভকে ধরে ফেলবে। সর্বপ্রথম ভাঙবে- কোরআনের শাসন। সর্বশেষে- নামায।” (মুসনাদে আহমদ-২২২১৪, তাবারানী-৭৪৮৬)উপরিউক্ত সকল আলামতের ব্যাপকতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুসলিম উম্মাহকে একের পর এক নতুন ফিতনা গ্রাস করবে। কিন্তু মুসলিমরা হতাশ হবে না, বরং তারা আশায় থাকবে। আহলে বাইতের সে-ই সদস্যের যার আগমনের বার্তা রাসূল (সা) দিয়েছেন। রাসূল (সা) বলেছেন, “পৃথিবীর জীবন সায়াহ্নে যদি একটি মাত্র দিন অবশিষ্ট থাকে, তবে সে-ই দিনটিকে আল্লাহ দীর্ঘ করে আমার পরিবারস্থ একজন ব্যক্তিকে প্রেরণ করে ছাড়বেন, তার নাম আমার নাম এবং পিতার নাম আমার পিতার নামের সদৃশ হবে।” (তিরমিযি-২২৩০, আবু দাউদ- ৪২৮৪) ইমাম মাহদির আগমন হল এক অন্যতম আলামত। তিনি আবারো মুসলিমদের এক পতাকার তলে জড়ো করবেন। তাকে সাহায্য করবে খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল। তার নেতৃত্বে মুসলিমরা যুদ্ধ করবে। এক ভয়াবহ যুদ্ধ হবে, হাদিসে এই যুদ্ধকে বলা হয়েছে মালহামা। যুদ্ধে প্রতি ১০০ জনে ৯৯ জন মারা যাবে, মুসলিমরা পুনরায় কনস্টান্টিনোপল জয় করবে। হাদিসে এসেছে- “জেরুজালেমের উন্নতি মদিনার বিনাশের কারণ হবে, মদিনার বিনাশ বিশ্বযুদ্ধের ( মালহামা র) সূচনা করবে। বিশ্বযুদ্ধের সূচনা মানে কনস্টান্টিনোপল বিজয় এবং
কনস্টান্টিনোপল বিজয় মানে দাজ্জালের আত্নপ্রকাশ।” (আবু দাউদ- ৪২৯৬)দাজ্জাল হল আদম সন্তান। মানুষ হলেও তাকে আল্লাহ অনেক ক্ষমতা দেয়েছেন, যাতে সে দুর্বলদের ঈমানহারা করতে পারে। দাজ্জাল হলা মহাফিতনা। আদম (আঃ) থেকে কেয়ামত অবধি দাজ্জাল হল সবচাইতে বড় ফিতনা। সে এমন অলৌকিক বিষয় দেখাবে যা দেখে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে। দাজ্জাল প্রথমে নিজেকে নবী ( মসীহ) ও পরে আল্লাহ হিসেবে দাবী করবে। ইহুদিরা তাকে সত্য মসীহা জ্ঞান করবে। দাজ্জাল পুরো দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াবে কিন্তু মক্কা ও মদিনায় সে প্রবেশ করতে পারবে না। সেখানে ফেরেশতারা পাহাড়া দিবে। সে মৃত মানুষ ও জন্তুকে জীবিত করবে। তার ইচ্ছায় বৃষ্টি হবে। তার দুই পাশে থাকবে আগুন ও পানি তথা জান্নাত ও জাহান্নাম। যে তাকে বিশ্বাস করবে না তাকে সে আগুনে নিক্ষেপ করবে প্রকৃতপক্ষে সেটা মুমিনদের জন্য জান্নাত হবে। তার ডান চোখ হবে অন্ধ। তার কপালে লেখা থাকবে কাফির। সে দুনিয়াতে ৪০ দিন থাকবে, তার প্রথম দিন হবে আমাদের এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন হবে এক মাসের, তৃতীয় দিন হবে এক সপ্তাহের সমান, এবং বাকি দিন গুলো স্বাভাবিক দিনের মতই হবে। সে ইমাম মাহদিকে তাড়া করবে, মুসলিমরা তখন সিরিয়ার একটি মসজিদে অবস্থান নিবে, দাজ্জালের সেনা বাহিরে অবস্থান নিবে। এক সময় সত্য মসিহা ইসা (আ) আকাশ থেকে নেমে আসবেন, এবং ইমাম মাহদির ইমামতিতে নামাজ আদায় করবেন। পরে দরজাখুলে দেয়ার নির্দেশ আসবে, দাজ্জাল তাকে দেখে পালাতে চাইবে তিনি তাকে হত্যা করবেন। দাজ্জালের বিনাশের সাথে সাথে ইহুদিদের নিধন শুরু হবে। এটাই হবে শেষ যুদ্ধ। তখন পাথর ও গাছ কথা বলবে- “হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদি লুকিয়ে আছে, একে হত্যা কর।”একসময় খবর আসবে ইয়াজুজ মাজুজ বের হয়ে আসছে। ইসা (আ) মুসলিমদের নিয়ে এক পাহাড়ের উপরে অবস্থান নিবেন। আল্লাহ মহামারি ও বিশালাকার পাখি পাঠিয়ে তাদের হত্যা করে দুনিয়াকে তাদের ফ্যাসাদ থেকে রক্ষা করবেন। এভাবে কয়েক যুগ অতিবাহিত হবে। আল্লাহ এক ঠান্ডা বাতাস পাঠাবেন যা প্রত্যেক ইমানদারের রূহ কবজ করে নিবে। এরপরে পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠবে, এটার অর্থ হল এখন থেকে আর কারো তাওবা কবুল করা হবে না। এর পরেই হবে কেয়ামত। ইসরাফিল (আঃ) শিঙ্গায় ফুৎকার দিবেন।
হযরত হুযায়ফা (রা) বলেন, “আমরা পরস্পর আলাপরত ছিলাম, নাবী করিম (সা) এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আলোচনা করছিলে? সবাই বলল, কেয়ামত প্রসঙ্গে। তখন তিনি বললেন, “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষন না তোমরা দশটি (বৃহত্তম) আলামত দেখতে পাও- ধোঁয়া, দাজ্জাল, অদ্ভুত প্রাণী, পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, ইসা (আ) এর প্রত্যাগমণ, ইয়াজুজ-মাজুজের উদ্ভব, তিনটি ভূমিধ্বস-প্রাচ্যে, পাশ্চাত্যে ও আরব উপদ্বীপে, এবং সর্বশেষ ইয়েমেন থেকে উত্থিত হাশরের ময়দানের দিকে তাড়নাকারী বিশাল অগ্নি।” (মুসলিম)১৪০০ বছর আগে রাসূল (সা)-এর বর্ণিত প্রতিটি ভবিষ্যতবাণী সত্য হচ্ছে। অবশ্যই তার প্রতিটি কথা সত্য। সংশয়বাদীদের নিকট এই ভবিষ্যতবাণী গুলো ওপেন চ্যালেঞ্জ করছে। কি করে একজন মানুষ এত বছর পূর্বে, আজকের সমাজের হুবহু বর্ণনা দিতে পারলেন?- এটাই প্রমাণ তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত সত্য নবী। তিনি বলে গেছেন, সন্তানরা উগ্র হয়ে যাবে, স্যাটেলাইট টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদির আবিস্কার হবে। তিনি বলেছেন, “অচিরেই আকাশ থেকে অনিষ্টকর বস্তু বর্ষিত হবে, এমনকি তা জনশূন্য সুদূর মরু প্রান্তরেও পৌঁছবে” আজ রেডিও, ডিস টিভি মরুভূমি ও সাগরের মাঝে পৌঁছে গেছে। তিনি বলেছেন, চাপাবাজি করে মানুষ টাকা আয় করবে, সমাজের নিকৃষ্ট ব্যক্তিরা বাজার দখল করবে, সমকামিতা ও লেসবিয়ানিজম বিস্তার করবে, নারীদের চরিত্রকে ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন মুভমেন্ট হবে, নতুন নতুন বাদ্যযন্ত্রের উদ্ভাবন হবে, এমনকি তিনি বলেছেন মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট মানুষের মাথায় থাকবে- অর্থাৎ বর্তমান হ্যাডফোন, জারজ শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে- আমেরিকায় মোট জন্মাহারের শতকরা ৫০ ভাগ হল জারজ শিশু, লাঠি ও জুতার ফিতা মানুষের সাথে কথা বলবে, মালিকের অবর্তমানে বাসায় কি কি হয়েছে তা বর্ণনা করবে- এখানে সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়েব ক্যাম, বিভিন্ন গেজেট ও স্মার্ট ফোন এর ইঙ্গিত করা হচ্ছে, মানুষ কাপড় পরেও নগ্ন মনে হবে, মায়ের অবাধ্য হয়ে স্ত্রীর আনুগত্য করবে, প্রকাশ্যে যৌনাচার হবে ইত্যাদি সব কিছু ১৪শ বছর পূর্বে কি করে তিনি বলে গেছেন? অবশ্যই তিনি আল্লাহর রাসূল। তার প্রতিটি বাণী সত্য- আজ আমরা নিজ চোখে এর প্রমাণ দেখছি। এগুলো হল আল্লাহর নিদর্শন , তিনি চান বান্দারা তাওবা করে ফিরে আসুক। আলামত জানার পরেও কি আমরা ঈমানহারা বা দুর্বল ঈমান রেখে এবং বদআমল করেই যাব? এই আলামত আমাদের ঘুম ভাঙানোর জন্য যথেষ্ট নয়? আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন, ফিতনাকে ফিতনা হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা) বলেন, “অন্ধকার রাত্রির ন্যায় ক্রমাগত ফিতনা আসার আগে-ই যা আমল করার করে ফেলো। মানুষ তখন সকালে মুমিন থাকবে, বিকালে কাফির হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন থাকবে, সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার তুচ্ছ লাভের আশায় নিজের ঈমানকে সে বিক্রি করে দেবে।” (মুসলিম- ৩২৮)
কোন মন্তব্য নেই