পৃথিবীর বিখ্যাত ২০ সিরিয়াল কিলার।

পৃথিবীর বিখ্যাত ২০ সিরিয়াল কিলার।

মানুষ হল আল্লাহ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষের কাজ হল তারই মত আরেকজন মানুষকে সাহায্য করা। কিন্তু যখন মানুষ রুপের এই দোপেয়ে প্রাণী নিজের স্বার্থ নিয়ে মত্ত হয়ে ওঠে তখন তার কাজকর্ম হয়ে ওঠে পশুর ন্যায়। আজ আমারা এমন কিছু মানুষের সম্পর্কে জানব যারা, হয়তবা আকৃতিগতভাবে হয়ত মানুষ ছিল কিন্তু তাদের কাজকর্ম চরিত্র সবই ছিল পশুর থেকেও জঘন্য।
১। রবার্ট হানসেনঃরবার্ট হানসেন হল আমেরিকার একজন বিখ্যাত সিরিয়াল কিলার। হানসেন আইওয়ার এস্টারভীলেতে ১৫ই ফেব্রুয়ারী ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম ক্রিস্টিয়ান ও মাতার নাম এডনা হানসেন। শৈশব ও কৈশোর সর্বত্র, হানসেনকে শান্তশিষ্ঠ ও একাকী হিসেবে বর্নানা করা হয়েছে। তার চিরস্থায়ী ব্রুণ ও গুরুতর তোতলামির জন্য সে সবসময়য় স্কুলে পীড়ন সহ্য করত। ১৯৫৭সালে হানসেন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর সদস্য
হিসেবে তালিকাভুক্ত হন এবং কার্যচ্যুত হওয়ার পূর্বে এক বছর সেনাবাহিনীতে সেবা প্রদান করেন। পরবর্তীতে হানসেন পোচাহন্টাস, আইওয়ার পুলিসএকাডেমিতে একজন সহকারী কসরত প্রশিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
সেখানে তিনি তার চেয়ে ছোট একজন নারীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন এবং ১৯৬০ সালের গ্রীষ্মে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৬৭ সালে তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে অ্যাংকারিজ, আলাস্কায় স্থানান্তরিত হন, যার সাথে তিনি ১৯৬৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। অ্যাংকারিজে তার প্রতিবেশিরা তাকে পছন্দ করত এবং তিনি তাদের কাছে স্থানীয় শিকারী চ্যাম্পিয়ান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি একটি চেইনশতে চুরির অপরাধে গ্রেফতার হন এবং তাকে তার মেজাজ নিয়ন্ত্রনের জন্য লিথিয়াম নেওয়ার জন্য বলা হয়। তাকে কখনোই অনুষ্ঠানিকভাবে ঔষধ নেওয়ার জন্য বলা হয়নি। জ্ঞাত শিকার ছিলেন রবার্ট হানসেন। আলাস্কার প্রায় ৩০ জনেরও বেশি নারীকে ধর্ষিত ও লাঞ্ছিত করেন। তিনি কমপক্ষে ১৭ জন নারীকে হত্যা করেন, যাদের সকলেরই বয়স ১৬ থেকে ৪৬ এর মধ্যে। ১৯৭১ এবং ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি ১৭ থেকে ২১ জনের
কাছাকাছি নারীকে অ্যাংকারিজ, আলাস্কায় হত্যা করেছেন। ১৩ই জুন ১৯৮৩ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ঐ বছরই তাকে দোষী সাব্যস্থ করা হয় এবং বর্তমানে তিনি আলাস্কার সেওয়ার্ডের স্প্রিং ক্রীক কারেকশনাল সেন্টারে ৪৬১ বছরের সাজা ভোগ করছেন।
২। থিয়াগোঃ মানুষ ক্ষমতার জন্য কী না করতে পারে। আপনি ভাবছেন কী আর করবে? কিন্তু আমি বলি সেটা আপনার ধারনা বা চিন্তাটাকে অতিক্রম করতে পারবে। তেমনি একজন কিলার হল থিয়াগো। যে কি না নিজের নাম গিনেস বুকে লেখার জন্য প্রায় একে একে ৩৯ জন নিরীহ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে অতি চতুরতার সহিত(আমি বলি গিনেস বুকে নাম লেখাবি ভাল কথা তবে মানুষ হত্যা করে কেন? অন্য কোন উপায় কি ছিল না?)। গোয়ানিয়া রাজ্যের রাজধানী গোইয়াসে মায়ের সঙ্গেই থাকতো এই সিরিয়াল কিলার। তার খুনের শুরুটা হয়েছিল একজন মোটরবাইক চালক খুন করার মধ্যদিয়ে। ট্রিগারে চাপ দেয়ার আগে সে চিৎকার করে বলতো ‘ডাকাত ডাকাত’। চিৎকারে লোকজন জমায়েত হতো। আর এর মধ্যেই ফাঁক বুঝে সে হাওয়া হয়ে যেতো(আপনি কি বুঝতে পারছেন যে খুনি কত চতুরতার সাথে সে কাজটা করে নিরাপদে সরে পড়ার জন্য পথ করে রেখেছিল)। তার হাতে নিহতদের মধ্যে নারী সংখা ছিল ১৬ জন। গোয়ানিয়া শহরে বিপরীত লিঙ্গের পোশাকে অভ্যস্ত এসব মহিলার অনেকেই ছিল বাস্তুহারা। তার খুনের তালিকায় সর্ব কনিষ্ঠ বালিকার বয়স ১৪ বছর। একটি পার্কে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয় গত জানুয়ারিতে (২০১৫সালে)। একের পর এক হত্যার ঘটনায় থিয়াগোকে ধরতে গঠন করা হয়
পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। অনেক প্রচেষ্টার পর তাদের হাতে আটক হয় এ দুর্ধর্ষ কিলার। অবশ্য পুলিশ যখন তাকে আটক করে তখন তার বিচার চলছিল থালা চুরির অপরাধে(কিন্তু প্রবাদে আছে, কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হল)। ঠিক তাই, থালা চুরির অপরাধ বের করতে গিয়ে বের হয়ে গেল তার খুনের রহস্য। বর্তমানে সে এখন পুলিশি হেফাজতে আছে।
৩। জন ওয়েনি গেসিঃ জন ওয়েনি গেসি দ্য কিলার ক্লাউন নামে পরিচিত। তবে প্রতিবেশীরা তাকে একজন মজার মানুষ ও সম্মানীত একজন ব্যবসায়ী হিসেবেই জানত। ক্লাউনের পোশাক পরে বিভিন্ন উৎসবে সবাইকে মজা দিতে তার জুড়ি ছিল না। অথচ এমন মজার মানুষের
ভেতরে যে একটা অমানুষের বাস ছিল তা কারো জানা ছিল না(এটাই তো স্বাভাবিক নিয়ম। যার ভাল গুন আছে তার খারাপ গুনও আছে)।১৯৬৮ সালে দুইজন যুবককে যৌন
নির্যাতনের জন্য গ্রেফতার হন গেসি। আদালত সে বিচারে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু অতি অমায়িক আচার-ব্যবহারের জন্য মাত্র ১৮ মাসে প্যারোলে মুক্তি পান(হয়তবা জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য এটাই ছিল তার অস্ত্র) । জেল থেকে বের হয়েই বিয়ে করেন।কিন্তু নিজেকে ভাল করতে পারেনি সে(কথায় আছে কুকুরের লেজ কখনও সোজা হয় না)। সমকামী এ সিরিয়াল কিলার নিজের বাসা ও গাড়িতে তরুণী ও যুবকদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়াতেন এবং কাজ শেষে হত্যা করতেন। বাসায় কাউকে নিয়ে এলে তাকে খুন করে বাসার আঙ্গিনার মধ্যেই মাটিচাপা দিয়ে রাখতেন। আর বাইরে কাউকে খুন করে মৃতদেহ নদীতে ফেলে দিতেন। গ্রেফতা"রের পর তার আঙিনা থেকে বের হয় মানুষের হাড়গোড়। আদালতে গেসি নিজের দোষ স্বীকার করেন। ১৯৯৪ সালে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেওয়া হয়।
৪। জেফরি ডেহমঃ জেফরি ডেহম নামটি শুনলেই যেন কেমন কেমন লাগে। হ্যাঁ এই সিরিয়াল কিলারই মার্কিন ইতিহাসে ভয়ঙ্কর ও বিকৃত সিরিয়াল কিলারের মধ্যে অন্যতম একজন। ১৩ বছরে তিনি ১৭ জন যুবককে খুন করেন। খুন করার আগে ধর্ষণ, নির্যাতন ও নরখাদকের আচরণ ছিল তার। কাউকে খুন করার আগে তার সঙ্গে কানামাছি কানামাছি খেলতেন খুনি (যেন খুব মজার খেলা খেলছে মানুষ হত্যা করে। ‘শিকার’ যতক্ষণ না দৌড়
দিত ততক্ষণ জেফরি তাকে কিছুই বলত না(এটা তো দেখি বাংলাদেশের RAB এর রুল)। যখনই বাঁচার আশায় কেউ দৌড় শুরু করত তখন তাকে পেছন হতে আক্রমণ করে খুন করত। জেফরি এমনই বিকৃত মানসিকতার ছিল যে কাউকে মেরে ফেলার পর সেই মৃতদেহের সঙ্গেই যৌন সম্পর্ক করত এবং মৃতদেহের এক টুকরা মাংসও খেত। ১৯৯৪ সালে কলম্বিয়া কারাগারে বন্দি অবস্থায় আরেক বন্দির প্রহারে মারা যায় জেফরি। টেড বান্ডি একটু বেশিই সুদর্শন ও বন্ধুসুলভ ছিল বান্ডি। কিন্তু ভেতরটা ছিল পশুর মতো। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ সাল এই ৪ বছরে ৩০ জনেরও বেশি যুবতীকে খুন করে বান্ডি। খুন করার ধরনটা ছিল
একটু আলাদা। যুবতির পিছু নিয়ে তার বাসায় যেত এবং ঘুমের মধ্যেই হত্যা করত। তারপর মৃতদেহের সঙ্গে যৌন মিলন করে তার অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ আলাদা করত এবং স্মারক হিসেবে মৃতদেহের মাথা নিয়ে এসে রাখত তার নিজের বাসায়(কতটুকু অমানুষ হলে কাজটা করা যায় ভাবতে পারছেন?)। অবশেষে ১৯৭৯ সালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এবং ১৯৮৯সালে বৈদ্যুতিক চেয়ারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।

৫। গ্যারি রিজওয়েঃ মাত্র ১০ বছরে ৭১ যৌনকর্মীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে গ্যারি রিজওয়ে। প্রথম ৫ জনকে হত্যার পর গ্রিন নদীতে ফেলে দেওয়ায় গ্যারি হয়ে যান বিখ্যাত ‘গ্রিন রিভার কিলার’। প্রথমে কোন যৌনকর্মীকে গাড়িতে তুলে আনতো এবং গল্প করতে করতে বিশ্বাস অর্জন করত। এরপরই যৌনকর্মীকে গলা টিপে মেরে ফেলতো। বাকিদের মতো সেও মৃতদেহের সঙ্গে যৌন মিলন করত। মৃতদেহটিকে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় শুয়ে বা বসিয়েও রাখত যৌনমিলনের সময়। খুব চতুরতার কারনে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে একের পর এক হত্যা করে গেছে গ্যারি রিজওয়ে। অবশেষে ২০০১ সালে গ্যারিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যতদুর জানা যায়
গ্যারি এখনও বেঁচে আছে এবং ওয়াশিংটন জেলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করছে।

৬। হেনরি লি লুকাসঃ হেনরি লি লুকাস বিখ্যাত এই লেডি কিলারের জীবনী নিয়ে পোর্ট্রটে অব এ সিরিয়াল কিলার নামের হলিউডে সিনেমা তৈরি হয়েছিল। হেনরি লুকাস নিজের মাকে হত্যা করে ১০ বছর জেলে ছিল(যাক পৃথিবিতে আরেক ঐশির সন্ধান পাওয়া গেল)। জেল থেকে বের হয়ে আরেকজন সঙ্গী নিয়ে একের পর এক খুন করে গেছে। প্রায় ২০ বছরে ৬০০ জনকে হত্যা করেছে বলে আদালতে স্বীকার করেছে। পুলিশ ৩৫০ জনকে হত্যার প্রমাণ পেয়েছে। ২০০১ সালে হেনরি কারাগারেই মারা যায়।

৭। এলিন অউরনসঃ নারী সিরিয়াল কিলারের
মধ্যে এলিন অউরনস অন্যতম। এলিন পেশায় একজন পতিতা ছিলেন। মাত্র এক বছরেই তিনি ৭ জন পুরুষকে হত্যা করেছেন। তবে আদালতের কাছে তিনি বলেন যৌন সম্পর্কের সময় পুরুষরা তার ক্ষতি করতে চাওয়ায় সে খুন করেছে। এলিন ১৯৯১ সালে গ্রেফতার হন এবং ২০০২
সালে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে তাকে মেরে ফেলা হয়। সিরিয়াল কিলার এলিনের জীবনী নিয়ে তৈরী হলিউড সিনেমা মনস্টার-এ এলিনের চরিত্রে অভিনয় করে শার্লিজ থ্যারন অস্কার পান।

৮। রিচার্ড ট্রেন্টন চেইসঃ ভ্যাম্পায়ার হিসেবে পরিচিত সিরিয়াল কিলার রিচার্ড ট্রেন্টন চেইস শুধু খুনই করতেন না, মারার পর লাশের রক্ত পান করতেন ও মাংস চিবিয়ে খেতেন। ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় এক মাসে ৬ জনকে হত্যা করেন তিনি। প্রথমে ছোট ছোট
প্রাণী হত্যা করে ব্লেন্ডার মেশিনে ব্লেন্ড করতেন রিচার্ড। প্রাণী নিধন আইনে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলে মানসিক সমস্যাগ্রস্ত থাকায় মুক্তি দেয় আদালত। মুক্তি পাওয়ার পর আর কোনও প্রাণী নয় বরং মানুষই মারতে শুরু করেন রিচার্ড। মানুষ হত্যার পর মৃতদেহের সঙ্গে যৌনকর্ম করে তাদের রক্ত দিয়ে স্নান করতেন এবং মৃতদেহ কাঁচাই খেয়ে ফেলতেন ভয়ঙ্কর কিলার রিচার্ড। ১৯৭৯ সালে গ্রেফতার
হয়ে বিচারের মুখোমুখি হলে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ১৯৮০ সালে জেলেই আত্মহত্যা করেন রিচার্ড।

৯। অ্যান্ড্রি শিকাটিলোঃ ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত সোভিয়েত কিলার অ্যান্ড্রি শিকাটিলো ১৯৭৯ সালে ৯ বছরের একটি মেয়ে শিশুকে হত্যা করার পর বুঝতে পারেন তার যৌন তৃপ্তির রহস্য। তারপর একের পর এক প্রায় ৫৮ নারী ও শিশুকে হত্যা করে আর তাদের সঙ্গে যৌনকর্ম করে বিকৃত
মানসিকতার অ্যান্ড্রি। শিকাটিলো অনেকবারই গ্রেফতার হন কিন্তু, উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ছাড়াও পেয়ে যান। অবশেষে ১৯৯০ সালে উপযুক্ত প্রমাণ পেয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং অ্যান্ড্রি আদালতের কাছে ৩৬টি খুনের ঘটনা স্বীকার করে। ১৯৯৪ সালে অ্যান্ড্রি শিকাটিলোকে আদালত মৃত্যুদণ্ড দেয়।
১০। দেনিস র্যাডারঃ যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস অঙ্গরাজ্যের সিরিয়াল কিলার দেনিস র্যাডার এতটাই চতুর ছিলেন যে প্রতিটি খুনের পর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিতেন ঘটনা। খুন করার আগে ভুক্তভোগীর সঙ্গে ইঁদুর-বেড়াল খেলতেন।কাউকে ধরে এনে প্রথমে গলা টিপে অজ্ঞান করতেন। জ্ঞান ফেরার পর আবারও গলা টিপে নির্যাতন চালাতেন। এভাবে তিনি কমপক্ষে ১০ জনকে হত্যা করেছেন কিন্তু পুলিশ তার কোনও হদিসই পায়নি। অবশেষে দেনিসের পাঠানো একটি ফ্লপি-ডিস্ক থেকে পুলিশ ক্লু পায়। সেই ফ্লপিতে দেনিসের কিছু তথ্য ডিলিট করা ছিল যা বিশেষজ্ঞদের দিয়ে উদ্ধার করে তার সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।।গ্রেফতার হওয়ার পর ২০০৫ সালে আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।

১১। জিল দ্যা রাইঃ জিল দ্যা রাইয়ের জন্ম ১৪০৪ সালে ফ্রান্সে। তাকে বিবেচনা করা হয় আধুনিক সিরিয়াল কিলারদের পথিকৃত হিসাবে। রাই তার কিলিং মিশন শুরু করার পূর্বে ছিল মিলিটারী ক্যাপ্টেন বিখ্যাত জোয়ান অব আর্ক এর অধীনে। এই ভংয়কর সিরিয়াল কিলার শতাধিক ব্যাক্তিকে হত্যা করে যাদের অধিকাংশই শিশু। তার শিকারের মধ্যে বেশীর ভাগই শিশুই ছিল ব্লন্ড চুল আর নীল চোখের অধিকারী (যেমনটি সে ছোটকালে ছিল দেখতে)। ধারনা করা হয় সে তার যৌন পূলক পেতে শিশুদের নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করত (শিকারের উপর মাস্টারবেশন করত)। ৮০ থেকে ২০০। ৬০০-র উর্দ্ধে। তার অধিকাংশ শিকারের বয়স ছিল ৬ থেকে ১৮ এর মধ্যে। যদিও রাই বালকদেরই তার শিকার হিসেবে বেশী পছন্দ করত তবে বালিকারাও তার হাত থেকে নিস্তার পেতো না।

১২। রিচার্ড ট্রেটন সেচঃ এই আমেরিকান সিরিয়াল কিলারের জম্ম ১৯৫০ সালে। হত্যাকান্ডের পর তাদের রক্তপান এবং শিকারের মাংস ভক্ষনের অভ্যাসের কারনে তার ডাক নাম ছিল " ভ্যাম্পায়ার অব স্ক্রেরামেন্টো"। তার প্রথম শিকার ৫১ বছর বয়সী ইন্জিনিয়ার এমব্রোস গ্রিফিন। সেচ গ্রিফিনকে হত্যা করেন ১৯৭৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর। তার ২য় শিকার টেরেসা ওয়ালিন নামের এক অন্তসত্ত্বা। সে তাকে হত্যার পর তার সাথে সহবাসে মিলিত হয় এবং তার রক্ত দিয়ে গোসল করে। ১৯৮০ সালের ৮ মে বিচারে গ্যাস
চেম্বারে তার মৃত্যুদন্ড হয়। দন্ডের জন্য অপেক্ষাকালীন সময়ে ১৯৮০ সালের ২৬ ডিসেম্বর তার সেলে তাকে মৃত অবস্থায পাওয়া যায়। ধারনা করা হয় প্রিজন ডাক্তারের প্রদত্ত ওষুধ অতিরিক্ত পরিমান খেয়ে সে আত্মহত্যা করে।

১৪। জেফরি ডামারঃ বিখ্যাত এই কিলারের জম্ম ১৯৬০ সালে। ডামারের শিকার সংখ্যা কমপক্ষে ১৭। তার হত্যাকান্ডগুলো ছিল সত্যিকার অর্থেই বিভীষিকাময়। ডামার শিকারকে জোর পূর্বক সমকামিতায় বাধ্য করা সহ তাদের অঙ্গ প্রতঙ্গ বিচ্ছিন্নকরন এবং শিকারের মাংস ভক্ষণ করত। ডামার ১৮ বছর বয়সে তার প্রথম হত্যাকান্ড ঘটায়।
১৯৮৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ বছর বয়সী একজন বালককে যৌন হয়রানির অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারে তার এক বছর সাজা হয়। সে বিচারকের কাছে দোষ স্বীকার করে এবং তাকে মেন্টাল থেরাপি দেয়ার অনুরোধ করে। ৫বছর সন্তোষজনক আচার আচরনের শর্তে তাকে প্রবেশনে মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তির পরপরই সে পুনরায়
হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে।১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে ডামার পুনরায় পুলিশের নিকট ধরা পড়লে তার ভয়ানক কুর্কীতিগুলো প্রকাশিত হয়ে পড়ে। বিচারে ডামারের ৯৩৭ বছর জেল হয়। বিচারকালে ডামার কারাবাসের পরিবর্তে তার মৃত্যুদন্ড কামনা করে।১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর কারাগারের জিমে কর্মরত অবস্থায় ক্রিস্টোফার স্কেভার নামক অপর একজন কয়েদীর মারাত্মক পিটুনিতে নিহত হন এই ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার।

১৫। আন্দ্রে চিকাতোলিঃ এই কিলারের জম্ম
ইউক্রেনে। পরবর্তীতে রাশিয়ান নাগরিক এই সিরিয়াল কিলার বুচার অব রোস্তভ বা রোস্তবের কসাই হিসেবে কুখ্যাত ছিল। তাকে দ্যা রেড রিপার নামেও ডাকা হতো। ১৯৭৮ হতে ১৯৯০ সালের মধ্যে ৫৩ জন নারী ও শিশুকে হত্যা করার অপরাধে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। সে যে প্রক্রিয়ায় হত্যাকান্ড ঘটাতো তা এক কথায় নৃংশস। চিকাতিলো তার প্রথম হত্যাকান্ড ঘটায় ১৯৭৮ সালের ২২ ডিসেম্বর। সে ৯ বছর বয়সী একটি মেয়েকে ফুসলিয়ে একটি পরিত্যাক্ত বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষন করতে উদ্যত হয়। মেয়েটি চিৎকার চেচাঁমেচি করলে সে তাকে ছুরিকাহত করে হত্যা করে এবং তার উপর বীর্যপাত ঘটায়। এভাবেই তার বিকৃত কামচরিতার্থের শুরু। সে তার শিকারদের ছুরিকাহত করতে করতে বীর্যপাত ঘটানোর মাধ্যমে যৌন পুলক লাভ করতো। ১৯৯৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এই কুখ্যাত খুনীকে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।

১৬। ক্যাথরিন নাইটঃ বিশ্বের ইতিহাসে ভয়ঙ্করতম
একজন নারী হিসেবেই গণ্য করা হয় ক্যাথরিন নাইটকে। অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণকারী নারী ক্যাথরিন নাইট, যাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় মৃত্যুর বিধান না থাকায়। তার বাবা ছিলেন একজন মদ্যপ। প্রকাশ্য তিনি তার স্ত্রীকে দিনে ১০ বার পর্যন্ত ধর্ষণ করেছিলেন। বাবার মতো অন্যায়ের পথে মেয়েও নেমেছিলেন। ক্যাথরিন তার প্রথম
স্বামীর দাঁত উপড়ে ফেলার পর তার হিংস্রতার প্রমাণ আসতে শুরু করে। যখন দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয় তখন তিনি তার স্বামীর আট সপ্তাহ বয়সী একটি কুকুরের জিহ্বা কেটে নেন এবং পরে কুকুরের চোখ তুলে ফেলেন। কয়েক মাস পরে জন চার্লস প্রাইস নামে একজনের সঙ্গে তার গোপন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রাইস অনেক ধন সম্পদের মালিক ছিলেন। ক্যাথরিনের হিংস্রতা সম্বন্ধে আগে থেকেই প্রাইস অবহিত ছিলেন। প্রাইসের সঙ্গে সম্পর্কের কিছু দিনের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন এই ক্যাথরিন। একপর্যায়ে ক্যাথরিন ৩৭ বার ছুরিকাঘাতে প্রাইসকে হত্যা করে। এরপর প্রাইসের মৃতদেহের চামড়া ছাড়িয়ে বেডরুমের দরজার পেছনের হুকের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। শুধু তাই নয়, প্রাইসের মৃতদেহ থেকে মাথা কেটে নিয়ে সেটা দিয়ে স্যুপ রান্না করে বাচ্চাদের জন্য রেখে বাইরে চলে যান ক্যাথরিন। কিন্তু বাচ্চারা বাড়ি ফেরার আগেই পুলিশ এসে হতভাগ্য প্রাইসের মরদেহ উদ্ধার করে। তখন মৃত্যুদণ্ডের বিধান না থাকায় তাকে ও প্যারল ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
১৭। এলিজাবেথ বিটোরিঃ এলিজাবেথ বিটোরিকে ধরা হয় পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার। যদিও তার খুনের সংখ্যা সঠিক ভাবে জানা যায়নি, তবু ও ইতিহাসে এলিজাবেথকে রক্তপিপাসু পিশাচিনী বলা হয়।
তিনি ব্লাড কাউন্টেস নামেও অধিক পরিচিত। এলিজাবেথ বিটোরি ছিলেন একজন হাঙ্গেরিয়ান নারী। জন্ম ১৫৬০ সালের ৭ আগস্ট হাঙ্গেরির বিটোরি পরিবারে। পিতা জর্জ বিটোরি। তিনি ছিলেন স্টিফেন বিটোরির ভাই। এই স্টিফেন বিটোরি ছিলেন একাধারে একজন নবেল লরিয়েট, কিং অব পোল্যান্ড এবং ডিউক অব ট্রান্সেলভানি। সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও কৃতকর্মের কারণে ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত রমণী হিসেবে ঘৃণার চোখে দেখা হয় এলিজাবেথকে। ফ্রান্স নোডিজডের সঙ্গে ১৫৭৫ সালের ৮ই মে এই এলিজাবেথ বিটোরির বিয়ে হয়। এলিজাবেথের
স্বামী ১৫৭৮ সালে হাঙ্গেরির সেনাপতি নিযুক্ত হন। স্বামীর অনুপস্থিতিতে ব্যবসা ও শাসন কাজে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন এলিজাবেথ। তখন থেকেই চড়া বেতনে এলিজাবেথের ওখানে কাজ করত কুমারী গৃহকর্মী। ধারণা করা হয়, এলিজাবেথ খুন করেছেন ৬৪০এরও বেশি কুমারীকে। যেসব কুমারী মেয়ে এলিজাবেথের ওখানে কাজ করতে যেত তারা আর ফিরে আসতে পারতো না বলেই জানা গেছে। এমনটাও শোনা যেত যে, এলিজাবেথ কুমারী ঐসব
নারীকে হত্যা করতো এবং তাদের রক্তে গোসল করতো। তাদের চিৎকারে এলিজাবেথ উল্লাস করতো। কিন্তু, সামাজিক অবস্থানের জন্য এলিজাবেথের বিচার না হলেও বাকি জীবন গৃহবন্দি করে রাখা হয় এলিজাবেথকে। ১৬১৪
সালে চার বছরের গৃহবন্দি অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
১৮। রোজমেরি পাউলিন রোজ ওয়েস্টঃ রোজমেরি পাউলিন রোজ ওয়েস্ট ১৯৫৩ সালে জন্ম নেয়া একজন বৃটিশ সিরিয়াল কিলার।যিনি রোজ নামে পরিচিত। রোজের বাবা ছিলেন একজন সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত রোগী। রোজের বয়স যখন ১৬ তখন থেকে বাবা তার ওপর চরমভাবে এবং প্রতিনিয়তই যৌন নির্যাতন চালাত। অন্যদিকে রোজের হিংস্রতাও ছিল মাত্রাতিরিক্ত। তার নৃশংসতার হাত থেকে নিজের কন্যা পর্যন্ত রেহাই পায়নি। তার ভয়ঙ্কর কীর্তিকলাপের জন্য ব্রিটেনের ২৫ গ্লুচেস্টার ক্রওয়েলের বাড়িটি হাউস অব হরর নামে পরিচিত। এই সিরিয়াল কিলার মহিলার স্বামীও তাকে কিলিংয়ের কাজে সহযোগিতা করতো। দুজনকেই পরবর্তীতে মানসিকভাবে বিকৃত হিসেবে অভিহিত করা হয়। রাতের অন্ধকারে শিকারের সন্ধানে বের হতেন রোজ। তারপর সুন্দর স্বাস্থ্যবান কোন ছেলেকে ধরে বাসায় নিয়ে আসতেন। প্রথমে ছেলেটি যৌন নিপীড়নের শিকার হতো রোজ এবং তার স্বামীর হাতে। এরপর ছেলেটিকে খুন করত তারা। ধারণা করা হয়, মানসিক বিকারগ্রস্ত রোজের হাতে ১২টিরও বেশি খুন হয়েছে।
১৯। লসে কোচ : লসে কোচ সর্বাধিক পরিচিত বুচেনউডের ডাইনি হিসেবে। তার আসল নাম ইলসে কোচ। ১৯০৬ সালে জার্মানিতে এক কারখানা শ্রমিকের ঘরে জন্ম নেয়া ইলসে কোচের মৃত্যু হয় ১৯৬৭ সালে। ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম নারী হিসেবে কোচের অবস্থানও শীর্ষে। বুচেনউডের কনসানট্রেশন ক্যাম্পের কমানড্যান্ট কার্ল কোচের স্ত্রী ছিলেন এই ইলসে কোচ। স্বামীর ক্ষমতা ছাড়াও কোচ নিজে ক্যাম্পের সুপারভাইজরের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। আর এই সুবিধা নিয়েই নিজের ভয়ঙ্কর ও বিকৃত ইচ্ছা চরিতার্থ করা শুরু করেন কোচ। প্রথমে বন্দিদের মধ্য থেকে বাছাই করে বিভিন্নজনের গায়ে ট্যাটু আঁকা হতো। আর যাদের শরীরে ট্যাটু আঁকা থাকত তাদের হত্যা করে ট্যাটুটি চামড়াসহ কেটে সংরক্ষণ করতেন কোচ। সেই সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গও সংগ্রহ করতেন। তবে কোচকোচের সবচেয়ে প্রিয় ও বিকৃত শখ ছিল সুন্দর চামড়াওয়ালা বন্দিদের হত্যা করে তাদের শরীরের চামড়া দিয়ে কুশন কভার, সাইড ল্যাম্প, বালিশের কভারসহ বিভিন্ন জিনিস বানানো। ভয়ঙ্কর এই নারীকে ১৯৪৩ সালে গ্রেপ্তার করা হলেও সুনির্দিষ্ট প্রমাণের অভাবে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে জায়গা পরিবর্তন করলেও দুই বছর পর আবারও আমেরিকান সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। তার কুকীর্তি এক এক করে প্রমাণ হয়। ১৯৪৭ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এর ২০ বছর পর জেলে থাকা অবস্থাতেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন বুচেনউডের ডাইনি ইলসে কোচ।

1 টি মন্তব্য:

Goldmund থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.