নকল সেলফোন টাওয়ার হতে সাবধান!
নকল সেলফোন টাওয়ার হতে সাবধান!
কিন্তু ফেইক সেলফোন টাওয়ার কিভাবে সম্ভব? যদি সম্ভব হয়েও থাকে, তো এটি কিভাবে কাজ করে। আর কেই বা এই ধরণের টাওয়ার ব্যবহার করে আপনার ডাটা স্প্যাই করতে পারে? সকল প্রশ্নের উত্তর, আজ এই পোস্টে আমি কভার করেছি।
এই সেলফোন টাওয়ার গুলো আকারে বিশাল দৈত্যাকার হয়ে থাকে এবং অনেক পরিমানে বিদ্যুৎ খরচ করে অনেক শক্তিশালী সিগন্যাল তৈরি করতে পারে। সেলফোন থেকে সামান্য সিগন্যাল গ্রহন করে সেলফোন টাওয়ার সেগুলোকে অ্যাম্পিফাই করে এবং প্রধান ষ্টেশনে পাঠিয়ে দেয়। তবে প্রথমে কোন সেলফোনকে কোন নির্দিষ্ট অপারেটর সেল টাওয়ার এবং প্রধান ষ্টেশনের সাথে যোগাযোগ করতে পারমিশনের প্রয়োজন হয়। আর এই বিশেষ পারমিশন গ্র্যান্ট করতে সিম কার্ড সাহায্য করে থাকে। সেলফোনে সিম লাগিয়ে ফোন অন করা মাত্র সেলফোন সিম থেকে আইএমএসআই গ্রহন করে এবং তা নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দেয়—এবং অ্যাক্সেস পাওয়ার জন্য নেটওয়ার্কের কাছে অনুরোধ পাঠায়। আর নেটওয়ার্ক সেই আইএমএসআই কে গ্রহন করে এবং অ্যথন্টিকেশন কী প্রদান করার জন্য অভ্যন্তরীণ ডাটাবেজ চেক করে। এবার সিম আর নেটওয়ার্কের মধ্যে আরো কিছু “কী” আদান প্রদান করার পরে সিম কার্ড সেলফোনকে টাওয়ার এবং নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড করিয়ে দেয়।
কিন্তু এখানে কিছু ব্যাপার রয়েছে, কখনোই কেউ একই নেটওয়ার্কে কানেক্টেড থাকা শর্তেও আপনার কল বা আলাদা তথ্য গুলোকে স্প্যাই করতে পারবে না, কেনোনা সেলফোন নেটওয়ার্ক অবশ্যই এনক্রিপশন পদ্ধতি ব্যবহার করে। তাহলে আপনাদের অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, তাহলে কেউ কিভাবে আপনার অজান্তে আপনারই কল আড়ি পেতে শুনতে পারে?
হ্যাঁ, নকল সেলফোন টাওয়ার ব্যবহার করে এরকমটা তখনোই করা সম্ভব হবে, যখন ফেইক টাওয়ারটি অরিজিন্যাল টাওয়ারের অ্যালগরিদমে কাজ করবে। উপরের প্যারাগ্রাফে বর্ণনা করেছি, কিভাবে সেলফোন আর সেল টাওয়ার কানেক্টেড হয়, ফেইক টাওয়ার একই রকমের আচরন করে এবং নিজেকে অরিজিন্যাল টাওয়ার হিসেবে প্রমাণ করানোর চেষ্টা করে। আপনার সিম কার্ড আর ফেইক সেলফোন টাওয়ার একই অ্যালগরিদমে একে অপরের সাথে কথা বলে এবং কী বা অথেনটিকেসন ইনফরমেশন শেয়ার করে। সিম কার্ড এবার ফেইক টাওয়ারকে আসল টাওয়ার মনে করে সেলফোনকে তার সাথে কানেক্টেড করিয়ে দেয়। আর এবার নকল টাওয়ার প্রথমে আপনার সেলফোনকে নিজের সাথে কানেক্টেড করে, তারপরে আপনার ফোনের সিগন্যালকে আসল প্রভাইডার টাওয়ারের সাথে কানেক্টেড করিয়ে দেয়, যাতে আপনি বাকি নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড থাকতে পারেন এবং ফোন কল বা আলাদা কাজ গুলো চালিয়ে যেতে পারেন। মানে আপনার আসল নেটওয়ার্ক প্রভাইডার আর আপনার সেলফোনের ঠিক মাঝখানে ফেইক টাওয়ার কানেক্টেড হয়ে থাকে।
এখন হয়তো আপনারা অনেকেই বলবেন, আপনার সেলফোন আসল টাওয়ার থেকে সিগন্যাল না নিয়ে নকল টাওয়ারের সাথে কেন কানেক্টেড হবে? এর কারণ হচ্ছে আপনার সেলফোনের কাজ করার ডিজাইন। আপনার সেলফোনকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে এটি সব থেকে কাছের এবং স্ট্রং সেল সিগন্যাল গ্রহন করে কাজ করে। ফেইক টাওয়ারকে এমনভাবে প্রেজেন্ট করা হয়, এটি আসল সেলফোন টাওয়ার থেকেও স্ট্রং সিগন্যাল তৈরি করে, ফলে আপনার সেলফোন স্বাভাবিক ভাবেই তার সাথে আগে কানেক্ট হওয়ার চিন্তা করে।
আপনার সেলফোন একবার এই ফেইক টাওয়ারের সাথে কানেক্টেড হয়ে গেলে, টাওয়ার আপনার প্রত্যেকটি একটিভিটির উপর স্প্যাইং করতে পারবে। আপনার মেটাডাটা থেকে আরম্ভ করে আপনার কল পর্যন্ত স্প্যাইং করা যাবে। এমনকি আপনাকে নকল টাওয়ার থেকে নকল ম্যাসেজও পাঠানো যাবে, কিন্তু সেটা দেখে মনে হবে আসল। সাথে যেকোনো নাম্বার স্পুফ করে আপনাকে কলও করা যাবে। হয়তো হুবহু আপনার ব্যাংকের কলিং সেন্টার নাম্বার থেকে আপনার কাছে কল আসবে আর আপনার সকল তথ্য গুলোকে হাতিয়ে নেওয়ার হবে।
এটা কোন কল্পনা নয়, চায়নাতে এরকম ঘটনার অলরেডি একজন শিকার হয়ে দ্যা ভার্জ ডট কম‘কে রিপোর্ট করেছেন। প্রথমে ব্যাক্তিটির কাছে তার ব্যাংক থেকে ম্যাসেজ আসে এবং পরে সে জানতে পারে তার ব্যাংক তাকে কোন ম্যাসেজ সেন্ডই করে নাই। তাকে ম্যাসেজে লিঙ্ক সেন্ড করা হয়েছিলো, আর সেই লিঙ্ক অনুসরণ করে তার $৬৫০ ডলার অ্যাকাউন্ট থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছিলো।
স্ক্যামার’রা একটি ডিভাইজের সাহায্য নিয়ে ফেইক সিগন্যাল তৈরি করেছিলো, যেটার সিগন্যাল কোয়ালিটি আসল টাওয়ার থেকে শক্তিশালী ছিল, আর ফোন স্বাভাবিকভাবেই শক্তিশালী সিগন্যালের সাথে কানেক্টেড হয়ে যায়। চায়নার একটি বৃহত্তর মোবাইল সিকিউরিটি ফার্ম ১.২ বিলিয়নের মতো ফেইক ম্যাসেজ ডিটেক্ট করেছিলো যেগুলো নকল টাওয়ার থেকে সেন্ড করা হয়েছিলো। তারা মোটামুটি প্রতিদিন ১৩ মিলিয়ন ফেইক এসএমএস ডিটেক্ট করেছিলো।
এখন আপনারা অনেকেই বলতে পারেন, সবুজ ভাই এই গুলোতো শুধু স্ক্যামিং ম্যাসেজ? শুধু স্ক্যামিং ম্যাসেজ কেন, আপনার কাছে আসল সার্ভিসের ম্যাসেজও আসতে পারে। কেন না ম্যাসেজের মাধ্যমে এখন অনেক কোম্পানি তাদের মার্কেটিং করিয়ে থাকে। তাহলে কি বুঝলেন, কোম্পানিরাও এরকম ফেইক সেল টাওয়ার বসিয়ে তাদের মার্কেটিং চালিয়ে যেতে পারে।
এই বিষয়বস্তু নিয়ে আরো তদন্ত করে খবর পেলাম, ইউএস গভর্নমেন্ট আর এনএসএ নিজে থেকেই এরকম ফেইক টাওয়ার ব্যবহার করে সন্দেহভাজন কারো কল এবং সকল একটিভিটির উপর নজর রাখে। মানে স্ক্যামার র্যাকেট নয়, সরকারও চাইলে এমনটা করতে পারে, এক্ষেত্রে কারো ডিটেইলস পাওয়ার জন্য অপারেটরদের কাছে সরকারের হাত পাতাতে হবে না।
নকল টাওয়ার থেকে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন?
এখন কথা বলি, এই ফেইক সেলফোন টাওয়ার থেকে বাঁচা যাবে কিভাবে সে প্রসঙ্গে।
আর এই ধরনের আকর্ষণীয় এবং চমকপ্রদ, বাস্তব সত্যি, তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত তথ্য জানার জন্য সবুজ বাংলা টিভি ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন।তাহলে আজকে এই পর্যন্ত অসংখ্য ধন্যবাদ কষ্ট করে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য। আশা করি আজকের এই পোস্ট টি সবারই অনেক উপকারে আসবে। সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, নিরাপদ থাকবেন Sobuz Bangla TV এর সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।
কোন মন্তব্য নেই