হ্যাকাররা যে ৭টি উপায়ে আমাদের ফোন হ্যাক করে থাকে।

হ্যাকাররা যে ৭টি উপায়ে আমাদের ফোন হ্যাক করে থাকে


যে কোন মুহূর্তে নিজের অজান্তেই আপনার ফোনটি হ্যাক হয়ে যেতে পারে। যদি জানেন হ্যাকাররা যেভাবে ফোন হ্যাক করে, তবে আপনি অবশ্যই সাবধান হয়ে যেতে পারবেন। আর আপনার ফোনটিকে হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবেন এবং নিরাপদে থাকবেন।

অনেক মানুষের মনেই কৌতুহল থেকে থাকে এটা জানার জন্যে যে হ্যাকাররা কিভাবে স্মার্টফোন হ্যাক করে থাকে। আর হ্যাক করার পর কিভাবে ফোন থেকে ব্যক্তিগত এবং অন্যান্য ডাটা কালেকশন করে থাকে। সত্যিকার অর্থে টেকনোলোজির উন্নয়নের সাথে সাথে হ্যাকারদের হ্যাক করার পলিসিতেও উন্নয়ন ঘটেছে। তাই যেসব কারণে ডিজিটাল ডিভাইস হ্যাক হতে পারে, সেসব সবারই জেনে রাখা দরকার।
এখন হ্যাকারদের হাতেও এমন সব ডিভাইস রয়েছে যেগুলো দিয়ে খুব সহজেই তারা আপনার, আমার হাতে থাকা ডিভাইসগুলো অনায়াসে হ্যাক করে ফেলতে পারে। বস্তুত, হ্যাকাররা এমন কিছু টেকনোলোজি ব্যবহার করে থাকে, যেগুলোর সাহায্যে আমাদের ফোন কলের কথা-বার্তা শুনতে পারে, এসএমএস পড়তে পারে। এমনকি, আমাদের ফোনে থাকা যাবতীয় ইনফর্মেশনের অ্যাক্সেস নিতে পারে। আরো আশ্চর্যের বিষয় যে, আমাদের ব্যাংকের তথ্য নিয়ে ব্যাংক থেকে টাকাও ট্রান্সফার করে ফেলতে পারে।
আমরা যে-সব স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকি, সেগুলো আসলে এক প্রকার ছোট কম্পিউটার। মাইক্রোসফট্ ওয়ার্ডে টাইপ করা থেকে শুরু করে ইমেল পাঠানোসহ যাবতীয় অনেক কাজই এখন কম্পিউটাররের মত মোবাইলেই করা যায়। এমনকি, ফেসবুক ব্যবহার থেকে শুরু করে অনলাইনে লেনদেনসহ সব কাজই আমরা এখন মোবাইল দিয়েই সেরে থাকি। তাই, হ্যাকাররা যখন আমাদের মোবাইল হ্যাক করে ফেলতে পারে, তখন ব্যাংকিংসহ যাবতীয় সব তথ্যই নিয়ে নিতে পারে। তবে, এমন ৮টি কমন লক্ষণ আছে যেগুলো দ্বারা বোঝা যায় যে ফোন হ্যাক হয়েছে। আর বুঝতে পারলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যায়।
আপনি যদি মনে করেন, আপনার ফোনটি আপনার নিজস্ব প্রাইভেট জোন এর মধ্যে আছে, তাহলে আপনি ভুল করবেন। এখন পর্যন্ত এমন কোনও ডিভাইস তৈরী হয়নি যা হ্যাক করা অসম্ভব। তাই, জেনে নিন যে ৭টি উপায়ে হ্যাকাররা ফোন হ্যাক করে থাকে।

হ্যাকাররা যেভাবে ফোন হ্যাক করে।

ফোন হ্যাক করার জন্যে হ্যাকাররা নানা রকম উপায় ব্যবহার করে থাকে। তার মাঝে কমন উপায়গুলো আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি, যাতে আপনারা সাবধান হয়ে যেতে পারেন, নিজেদের ফোন হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারেন।



১. ব্লু-টুথ অ্যাটাক


কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনের জন্যে ব্লু-টুথ একটি অসাধারণ টেকনোলোজি। এটি আমাদের হেডসেট কানেক্ট করতে সহায়তা করে। মোবাইলকে কম্পিউটারসহ অন্যান্য ডিভাইস, এমনকি প্রাইভেট কারের সঙ্গেও সিঙ্ক করতে সাহায্য করে। আর ব্লু-টুথই সবচেয়ে বড় সিকিউরিটি হোল যে হোলে ঢুকেই হ্যাকাররা সহজেই মোবাইল হ্যাক করতে পারে।
ব্লু-টুথ অ্যাটাকের ৩টি বেসিক টাইপ রয়েছে-
১. ব্লু জ্যাকিং
২. ব্লু স্ন্যারফিং
৩. ব্লু বাগিং



ব্লু জ্যাকিং: ব্লু জ্যাকিং অপেক্ষাকৃত বেশি ক্ষতিকর অ্যাটাকগুলোর মধ্যে অন্যতম। যার সাহায্যে হ্যাকাররা নির্দিষ্ট্য এরিয়ার ভেতরে থেকেই অযাচিত মেসেজ পাঠিয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্লু-টুথের এই হোল দিয়ে অ্যাটাকাররা মেসেজ ক্যারিয়ার হিসেবে ইলেকট্রোনিক বিজনেস কার্ড পাঠিয়ে ফোন হ্যাক করে থাকে।


ব্লু স্ন্যারফিং: ব্লু জ্যাকিং চেয়ে আরো মারাত্মক হ্যাকিং প্রসেস হচ্ছে ব্লু স্ন্যারফিং। কারণ, এটির মাধ্যমে হ্যাকাররা আরো বেশি সেনসিটিভ ইনফর্মেশন পেয়ে থাকে। এ ধরণের অ্যাটাকের মাধ্যমে হ্যাকাররা সাধারণত বিশেষ ধরণের সফট্‌ওয়্যার পাঠিয়ে থাকে। আর এ সফট্‌ওয়্যার ফোনে ঢুকতে পারলেই সেখানকার সব তথ্য অ্যাটাকারের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, এ ধরণের সফট্‌ওয়্যারগুলো মোবাইলে প্রবেশ করলেও মোবাইলের মালিক তা কখনোই দেখতে পায় না।


ব্লু বাগিং:
যখন একটি ফোন ডিসকভার মোডে থাকে, তখন একজন হ্যাকার ব্লু স্ন্যারফিং এর মত প্রায় একই রকম এন্ট্রি পয়েন্ট ইউজ করে। যাকে ব্লু বাগিং বলে। যদিও অধিকাংশ ফোনেই এই হোলটি ডিফল্টভাবে লক করা থাকে, তবু কিছু ফোন রয়েছে যেগুলোতে থাকা এই হোলটি দিয়েই হ্যাকাররা ফোনে প্রবেশ করে থাকে। আর এ ক্ষেত্রে হ্যাকাররার বেশিরভাগই সময় ইলেকট্রোনিক্স বিজনেস কার্ডই পাঠিয়ে থাকে।

২. কম্পিউটার পদ্ধতি
হ্যাকাররা কম্পিউটার পদ্ধতি ব্যবহার করেও ফোন হ্যাক করে থাকে। এ পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে-

ফিশিং: মোবাইলে ইন্টারনেট ব্রাজিংয়ের সময় হ্যাকাররা ফিশিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ফোন হ্যাক করে থাকে। আর এ পদ্ধতিতে আমাদের মোবাইল হ্যাক করা তাদের জন্যে খুবই সহজ। কারণ, আমারা যারা মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করি, তারা সচরাচর ব্রাউজারের লিংকটি দেখতে পাই না। এমনকি, কখনো দেখার চেষ্টাও করি না। যারফলে, ব্রাউজারে আমাদের ফোনের অনেক তথ্য থেকে যায় যেখান থেকে হ্যাকাররা ফিশিং পদ্ধতিতে তথ্যগুলো নিয়ে নিতে পারে।



ম্যালওয়্যার অ্যাপস্: নেট ব্রাউজিংয়ের সময় হ্যাকাররা আমাদের ফোনে এমন কিছু ম্যালওয়্যার অ্যাপস্ পাঠিয়ে থাকে, যেগুলো খুব সহজেই আমাদের অজান্তে আমাদের ফোনে ডাউনলোড হয়ে যেতে পারে। আর একবার ডাউনলোড হতে পারলেই এই ম্যালওয়্যার অ্যাপগুলো অনায়াসে আমাদের তথ্য ভান্ডারে ঢুকে যেতে পারে এবং সেগুলো হ্যাকারদের কাছে পাস করে দিতে পারে।



৩. স্পাই অ্যাপ্লিকেশন:- হ্যাকিং এর সবচেয়ে সহজ উপায়টি হল, কয়েক মিনিটের জন্য আপনার ফোনটি গোপণে দখল করে তাতে কতগুলো স্পাই অ্যাপ্লিকেশন যেমন Spy Phone App, Spyzie, or Spyera ইনস্টল করার মাধ্যমে তথ্য চুরি করা।



৪. পাবলিক বা ফ্রি ওয়াই-ফাই :- পাবলিক বা ফ্রি ওয়াই-ফাই হলো অরক্ষিত ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক। এসব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি অন্যদের সাথে আপনার সমস্ত ট্র্যাফিক ভাগ করেন। যার ফলে আপনার ফোনটি সহজেই হ্যাক করা সম্ভব। তবে এসব পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময় নিজেকে সুরক্ষিত রাখার উপায় আছে, দেখে নিতে পারেন।


৫. অজানা USB:-
একটি অজানা USB (এমনকি বিমান বা গাড়ীতে) এর মাধ্যমে আপনার ফোন চার্জ দিলে আপনার পারসোনাল তথ্য প্রকাশ এবং স্থানান্তর হওয়ার বেশ ঝুঁকি কাজ করে।



৬. এসএমএস ফিশিং:- ধরুন আপনি মোবাইল এ কোনো ম্যাসেজ পেলেন, যেমন আপনাকে বললো এটা উদাহরণ স্বরূপ একটা লিংক অথবা আপনার ছবি অথবা মানি ট্রান্সফার এর লিংক। তখন আপনি কৌতুহল বশতঃ লিংকটিতে ক্লিক করলেন এবং লিংকটি যদি মিথ্যা হয় তাহলে আপনার মোবাইল এর সব ম্যাসেজ হ্যাকাররা দেখতে পারবে।


৭. SS7
সিগন্যালিং সিস্টেম:- SS7 সিগন্যালিং সিস্টে এর সাহায্যে, টেলিফোন স্টেশনগুলোর দ্বারা হ্যাকার আপনার টেক্সট বার্তা ও ফোন কল পড়তে শুনতে এবং ট্র্যাক করতে পারে। কিন্তু সেলিব্রিটি না হলে আপনার চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।


হ্যাকাররা যেভাবে ফোন হ্যাক করে তা জানলেন। আশা করি, জেনে আপনাদের ভাল লেগেছে এবং আপনারা উপকৃত হয়েছেন। এখন আপনাদের কাজ হচ্ছে এগুলো থেকে সাবধান থাকা। অর্থাৎ এমন কোন সিকিউরিট হোল না রাখা যে হোল ব্যবহার করে একজন হ্যাকার সহজেই আপনাদের ফোনের অ্যাক্সেস নিয়ে নিতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই

Goldmund থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.