বিটকয়েনের দাম কখন বাড়ে, কেন বাড়ে?
বিটকয়েনের দাম কখন বাড়ে, কেন বাড়ে?
প্রচলিত মুদ্রার সঙ্গে বিটকয়েনের বড় পার্থক্য হলো, এর নিয়ন্ত্রণ কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিংবা সরকারের হাতে নেই। স্টক বা বন্ডে বিনিয়োগের সঙ্গেও রয়েছে বিস্তর ফারাক। কারণ এটি কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয় যে বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব পরীক্ষা করে বুঝবেন, তা কোন পথে এগোচ্ছে। বিটকয়েন এক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা। ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামের কেউ বা কারা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রাটি উদ্ভাবন করে। বিটকয়েনে লেনদেন লিপিবদ্ধ হয় ব্লকচেইন প্রযুক্তির ভার্চ্যুয়াল খতিয়ানে। বিটকয়েন কার কাছ থেকে কার কাছে গেল, তার হিসাব থাকে সেখানে। এটিই বিটকয়েনের মালিকানা প্রমাণ করে।
বিটকয়েনের মূল্য নির্ধারণ হয় কীভাবে?
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কোনো দেশের অর্থব্যবস্থা, আর্থিক নীতিমালা, মুদ্রাস্ফীতির হার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মতো বিষয়গুলো বিটকয়েনের মূল্য নির্ধারণ করতে পারে না। এর মূল্য নির্ধারণে যে বিষয়গুলো প্রভাব ফেলে, তা হলো
বিটকয়েনের চাহিদা ও জোগান
মাইনিংয়ের মাধ্যমে বিটকয়েন তৈরির খরচ
ব্লকচেইনে লেনদেন যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত পারিশ্রমিক
প্রচলিত বিটকয়েনের পরিমাণ
যে মাধ্যমে বিনিময় হয়
বিটকয়েনে লেনদেনে নানা রাষ্ট্রের বিধিনিষেধ
বিটকয়েনের অভ্যন্তরীণ পরিচালনব্যবস্থা
বিটকয়েনের জোগান দুভাবে প্রভাবিত হয়। প্রথমত, মাইনিংয়ের মাধ্যমে নতুন বিটকয়েন তৈরির হার আগে থেকেই নির্ধারিত। এই হার সময়ের সঙ্গে কমতে থাকবে। যেমন ২০১৬ সালে মোট বিটকয়েন বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৭ সালে ৪ দশমিক ৪ এবং ২০১৮ সালে এই হার ছিল ৪ শতাংশ। এতে বিটকয়েনের চাহিদা যত দ্রুত বাড়ছে, জোগান সে হারে বাড়ছে না।
দ্বিতীয়ত, বিটকয়েন প্রোটোকল অনুযায়ী সর্বসাকল্যে ২ কোটি ১০ লাখ বিটকয়েনের প্রচলন হবে। মোট বিটকয়েনের পরিমাণ সেই সংখ্যা ছুঁলে মাইনিংয়ের মাধ্যমে নতুন বিটকয়েন তৈরি আর সম্ভব হবে না। অর্থাৎ মোট বিটকয়েনের পরিমাণ সীমিত।
২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজারে মোট ১ কোটি ৮৫ লাখ ৮৭ হাজার বিটকয়েন প্রচলিত ছিল। সেটি সম্ভাব্য মোট বিটকয়েন জোগানের ৮৮ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যাটি এত দিনে আরও বেড়েছে নিশ্চয়।
প্রতিযোগিতার কথাও মাথায় রাখা জরুরি
বিটকয়েন নিঃসন্দেহে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টো মুদ্রা। তবে আরও অনেক এমন মুদ্রার প্রচলন হচ্ছে। বিটকয়েনের ‘নিকটবর্তী’ প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে রয়েছে এথেরিয়াম, টেদার, বাইন্যান্স কয়েন, কারডানো ও পলকাডট। ক্রিপ্টো মুদ্রার এই প্রতিযোগিতা বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো। এতে মূল্য চট করে আকাশচুম্বী হতে পারে না। তবে বিটকয়েনের বেলায় এটা এতটাই মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়েছে যে প্রতিদ্বন্দ্বী মুদ্রাগুলোর তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকার সুযোগ পেয়েছে।
নতুন বিটকয়েন তৈরির খরচও তো বাড়ছে
নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্তি
বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টো মুদ্রা দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ায় বিশ্বব্যাপী নীতিনির্ধারকেরা এমন ভার্চ্যুয়াল সম্পদ কী হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করবেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে ক্রিপ্টো মুদ্রা ‘সিকিউরিটিজ’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ। আবার একই দেশের কমোডিটি ফিউচার্স ট্রেডিং কমিশন এই মুদ্রাগুলোকে ‘পণ্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এতে কোন সংস্থা বিটকয়েনের মতো মুদ্রার নিয়ন্ত্রণ করবে, তা নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
বিটকয়েনের অভ্যন্তরীণ পরিচালনব্যবস্থা
কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা না থাকায় বিটকয়েনে লেনদেন সম্পন্ন করতে এবং নেটওয়ার্ক নিরাপদ রাখার ভার অনেকটা সফটওয়্যার ডেভেলপার এবং মাইনারদের ওপর। সাধারণ সমস্যার সমাধান দীর্ঘ সময়ের আগে সম্ভব হয় না। এতে বিটকয়েন কমিউনিটিতে হতাশা বাড়ছে।
বিটকয়েনে লেনদেন বর্তমানে যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, তা সেকেন্ডে কেবল তিনটি লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে। শুরুর দিকে সেটা কোনো সমস্যা না হলেও বিটকয়েনে লেনদেনের চাহিদা বাড়ায় এখন সে সফটওয়্যারের কারণেই লেনদেনে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। একসময় হয়তো বিরক্ত হয়ে বিনিয়োগকারীরা অন্য ক্রিপ্টো মুদ্রায় লেনদেনে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
বিটকয়েনের দাম কখন বাড়ে, কখন কমে?
বিটকয়েনের মূল্য ওঠানামায় প্রচারিত সংবাদ, অনুমান, প্রাপ্যতা প্রভৃতির প্রভাব আছে। যেমন নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হলে অনেক বিনিয়োগকারী তড়িঘড়ি করে তাঁদের বিটকয়েন বিক্রি করে দেন। এতে দাম কমে যায়। আবার ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশ পেলে হয় উল্টোটা। তা ছাড়া, বাজারে বিটকয়েন বিক্রির পরিমাণ বাড়লে মূল্য কমে। আবার যত বেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ এবং বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে বিটকয়েন গ্রহণ করছে, এর দাম তত বাড়ছে। আরেকটি ব্যাপার হলো, অনেকে মানুষ প্রচলিত মুদ্রায় বিশ্বাস না রাখতে পেরে বিকল্প মাধ্যম খুঁজতে থাকেন। বিটকয়েনের কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা না থাকায় এটিকে বেছে নিচ্ছেন অনেকে। এতেও দাম বাড়ছে।
আশা করছি আজকের এই পোস্টটি অনেক উপকারি ছিল, আর আপনাদের এই সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাকে কমেন্ট বক্সে করতে পারেন। আর আজকের এই পোস্টটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন এবং এই পোস্টটিকে সর্বোচ্চ পরিমাণ শেয়ার করার চেষ্টা করবেন।
https://www.youtube.com/channel/UCt2TKd4f6oQrzWh-GASXxPw?pbjrelo।
Wow, thanks for nicely writing!
উত্তরমুছুন