Li-fi কি! এবং এটা কিভাবে কাজ করে?

Li-fi কি! এবং এটা কিভাবে কাজ করে?


অনেক রিকুয়েস্ট পাওয়ার পর আজকে আমি কথা বলতে চলেছি লাইফাই এর সম্পর্কে। সবার প্রথমে দেখে নেওয়া যাক যে এই লাইফাই অর্থাৎ লাইট ফেরটিলিটি কিভাবে কাজ করে।
খুব সুন্দর ভাষায় বললে লাইফাই হলো লাইট বেস্ট ওয়াইফাই। ওয়াইফাইতে যেমন রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে ডেটা ট্রান্সমিট করা হয় লাইফাই এর ক্ষেত্রে ডেটা ট্রান্সমিট করার জন্য লাইটকে ব্যবহার করা হয়।আসল ব্যাপারটা হচ্ছে আমরা বাড়িতে লাইট সোর্স এর জন্য যে এলইডি লাইটগুলো লাগাই লাইফাই এর সাহায্যে সেই লাইটগুলোকে ব্যবহার করে ডেটা ট্রান্সমিট করাও সম্ভব। যখন কোন এলইডি লাইটে আপনি কনস্ট্যান্ট কারেন্ট ফ্লও করান তখন সেই লাইট টা আপনাকে একটা কনস্ট্যান্ট আলো দেয়।


আর যখনই আমরা ইলেকট্রিকের সাপ্লাইকে বন্ধ করে দিই তখন লাইট টাও বন্ধ হয়ে যায়। খুবই সিম্পল ব্যাপার আমার এটাও জানি যে ডিজিটাল দুনিয়াতে সবকিছু (০) শুণ্য আর (1) ওয়ানের ওপরেই নির্ধারিত হয়।
তাই এইক্ষেত্রে লাইটের মধ্যে দিয়ে যদি কোন কারেন্ট ফ্লও না হয়, তাহলে সেটা জিরো (0) হবে, এবং যখন বাল্বের মধ্যে দিয়ে ম্যাক্সিমাম কারেন্ট ফ্লও হবে তখন সেটা ওয়ান (1) হবে। আর ঠিক এই ভাবে যদি ওই লাইটকে ফ্লিকার করা হয় অর্থাৎ খুব দ্রুতগতিতে অফ অন অফ করা হয় তবে সেক্ষেত্রে জিরো (0) আর ওয়ান(1) এর ডাটা সিট তৈরি হয়।


আর এই ডাটা সেটকেই রিসিভার ইন্ড এ রিসিভ করে ওয়াইফাই কে চালানো সম্ভব। আপনার মনে হতে পারে যে আপনার ঘরের লাইটকে যদি বারবার ফ্লিকার মানে অন অফ করানো হয় তবে ঘরের মধ্যে আপনার তো অসুবিধা হতে পারে?
কিন্তু আপনার জানার জন্য বলে দিই যে আপনার বাড়িতে যে বালটা লাগানো আছে যদি সেটা অল্টারনেটিভ কারেন্ট এর সঙ্গে যুক্ত থাকে তবে এমনিতেই সেটা সেকেন্ডে পঞ্চাশবার অন অফ অন অফ হয় কারণ আমরা যে এলেক্ট্রিকে বাড়িতে ব্যবহার করি তার ফ্রিকোয়েন্সি ফিফটি হার্জ আর এটা কিন্তু আপনার চোখে ধরা পড়ে না।



তবে আপনি যদি মোবাইল ফোনের ক্যামেরা অন করেন তাহলে কিন্তু সেটা ধরা পড়তে পারে তবে লাইফাইয়ের এক্ষেত্রে যে ফ্লিলকারিন টা হবে সেটা আপনি বুঝতেও পারবেন না কারণ সেখানে অনেক বেশি ফ্রিকুয়েন্সি কে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট থেকে যে কানেকশনটা আপনার বাড়িতে আসবে সেটা প্রথমে একটা মডেম এর মধ্যে যাবে এবং মডেম থেকে একটা এলইডি ড্রাইভার এর মধ্যে যাবে যেটা আপনার বাড়ির এলইডি লাইট কে কন্ট্রোল করবে। এবার রিসিভার ইন্ড এ ওই লাইট সিগন্যালকে ইলেকট্রিক সিগনালে কনভার্ট করা হবে এবং সেটাকে আপনার কম্পিউটারের মধ্যে দেওয়া হবে যা সাহায্যে আপনার কম্পিউটার ইন্টারনেট কানেকশনটা পেয়ে যাবে এটাই হলো লাইফাই এর সিম্পল ডায়াগ্রাম।


তবে আমাদের কাছে ওয়াইফাই থাকা সত্ত্বেও আমাদের লাইফাইয়ের দরকারটা কেন পরল? প্রধানত এর পিছনের তিনটে কারণ আছে একটা হল আমাদের ডেটার প্রয়োজন ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে।
এছাড়া যে সমস্ত ডিভাইসগুলোকে আমরা ব্যবহার করি তাদের সবাইকে তারের সাথে কানেক্ট করা সম্ভব নয়।
তাই সবকিছু কে ওয়ারলেস হওয়া দরকার আর তৃতীয়তঃ ইন্টার্নেট অফ থিংস মানে আগে আমরা শুধু কম্পিউটার আর মোবাইলেতে ইন্টারনেট কে ব্যবহার করতাম কিন্তু বর্তমানে আমাদের ঘড়ি থেকে শুরু করে টিভি ফ্রিজ সবকিছুতেই ইন্টারনেট এর দরকার হয়। আর এর পর এমনও দিন আসতে চলেছে যে বাড়ির তালা চাবি ও ইন্টারনেটের সঙ্গেই কানেক্ট থাকবে। আর তাই এই সব কিছুর জন্য আমাদের হাই স্পিড ইন্টারনেট এর খুবই প্রয়োজন আমাদের ওয়াইফাই এর সাথে যে সবথেকে বড় সমস্যা টা উঠে আসে সেটা হল এর স্পিড অনেক কম।



তবে ধরুন যদি আপনার বাড়ির ওয়াইফাই এর সাথে দুটো কিংবা তিনটা ডিভাইস কানেক্টেড থাকে তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন না যে ওয়াইফাই স্পিড কম না ফাস্ট। আপনার কাছে ওটা নরমালি মনে হবে। কিন্তু যদি আপনি কোন পাবলিক প্লেসে যান যেখানে ওয়াই-ফাই এর এক্সেস সবাইকে দেওয়া হয়েছে যেমন কোন রেলস্টেশন স্টেডিয়াম কিংবা বড় কোন বিল্ডিং-এ তখন আপনি বুঝতে পারবেন যে ওই ওয়াইফাই টা অত বেশি ক্লায়েন্টকে একসাথে হ্যান্ডেল করতে সেই ভাবে সমর্থ নয়।



ক্লায়েন্ট বেড়ে গেলে স্পিড ড্রপ হয়ে যায়। এছাড়াও ওয়াইফাই সিকিউরিটি সিস্টেম খুব একটা বেশি ভালো নয়। আর যেহেতু আপনি দেখতেও পাবেন না যে কে আপনার ওয়াইফাই ইউজ করছে তাই একে হ্যাক করা তুলনামূলকভাবে ইজি। তো লাইফাই এর কথা যখন আমরা প্রথম শুনি তখন আমাদের কে কি বলা হয়? আমাদের বলা হয় যে প্রত্যেকটা ডিভাইস অনেক বড় একটা থ্রো পুট পাবে, মানে ডাটা ট্রান্সফার এবং রিসিভ করার জন্য অনেক বড় পাইপলাইন থাকবে প্রত্যেকটা ডিভাইসের কাছে।



তারপর বলা হয় যে এটা অনেক অনেক বেশি ফাস্ট হবে এবং হান্ডেট পার্সেন্ট সিকিউর হবে, যেহেতু লাইফাইকে ইউজ করতে গেলে আপনাকে ওই লাইটের কাছেই থাকতে হবে তাই ওয়াই-ফাই এর থেকে এর সিকিউরিটি টা অনেক বেশি থাকবে। তবে বাস্তবটা এর থেকে অনেক বেশি আলাদা ২০১৭ তে যখন প্রথম কিছু লাইফাই ডিভাইস আসে তখন দেখা যায় এদের স্পিড অনেক কম। মাত্র ৪৩ এমবিপিএস এর কাছাকাছি। তবে ওই বছরই অর্থাৎ ২০১৭ তে যদি আপনি ওয়াইফাই ডিভাইস কিনতে যেতেন তবে আপনি খুব ইজিলি ১০০ এমবিপিএস এমনকি ৩০০ এমবিপিএস এর ওয়াইফাই ও মার্কেটে পেতেন।



তবে বর্তমানে ২০২১ সালে এসে মার্কেটে গিগাবিটের লাইফাই পাওয়া যায়। কিন্তু এই গিগাবিটের লাইফাইয়ের দাম অনেক অনেক বেশি। এছাড়া আরও একটা সমস্যা আছে যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গেলে আপনাকে লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হবে। মানে দিনের বেলা যদি আপনি মনে করেন যে লাইট অফ করে রাখবেন, তাহলে আপনার কিন্তু ইন্টারনেট কাজ করবে না। মানে নানা ধরনের সমস্যা আছে এই লাইফাই প্রযুক্তিতে তাই এই টেকনোলজি টা এখন পর্যন্ত এত বেশি সাকসেসফুল এবং জনপ্রিয় নয়।



আর আগে যে ওয়াইফাই পাওয়া যেত সেগুলো সিম্প্লেক্স ছিল মানে হয় আপনাকে ডাটা সেন্ড করতে হবে নয়তো রিসিভ করতে হবে, কিন্তু বর্তমানে ডুপ্লেক্স ওয়াইফাই পাওয়া যায় যার সাহায্যে ডেটা সেন্ড এবং রিসিভ একসাথেই করা সম্ভব। তাই ওয়াই-ফাই এর ক্ষেত্রে স্পিডের প্রবলেম আগের থেকে অনেক কম হয়েছে। এই সমস্ত কারণে লাইফাই কে যতটা সাকসেসফুল এবং জনপ্রিয় হবে বলে মনে করা হয়েছিল। এই টেকনোলজিটা সেটা করতে পারেনি। এখন আপনাদের দের উপর নির্ভর করছে আপনারা কি লাই-ফাই' প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন নাকি বর্তমানে ব্যবহার করা ওয়াইফাই প্রযুক্তিতেই পড়ে থাকবেন?


আশা করছি আজকের এই পোস্টটি অনেক উপকারি ছিল, আর আপনাদের এই সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাকে কমেন্ট বক্সে করতে পারেন। আর আজকের এই পোস্টটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন এবং এই পোস্টটিকে সর্বোচ্চ পরিমাণ শেয়ার করার চেষ্টা করবেন।

আর এই ধরনের আকর্ষণীয় এবং চমকপ্রদ, বাস্তব সত্যি, তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত তথ্য জানার জন্য সবুজ বাংলা টিভি ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। তাহলে আজকে এই পর্যন্ত অসংখ্য ধন্যবাদ কষ্ট করে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য। আশা করি আজকের এই পোস্ট টি সবারই অনেক উপকারে আসবে।সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, নিরাপদ থাকবেন Sobuz Bangla TV & Sobuz Bangla Cyber Army এর সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।

সবুজ বাংলা টিভি ইউটিউব চ্যানেল লিংক:-

কোন মন্তব্য নেই

Goldmund থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.