ফেসবুক ব্যবহারের ভয়ানক পরিণতি!
ফেসবুক ব্যবহারের ভয়ানক পরিণতি!
তথ্য প্রযুক্তির যান্ত্রিকতার এই যুগে আমরা হারিয়ে ফেলছি সুন্দর পরিবেশ।আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের শৈশব,আমাদের কৈশোর এবং আমাদের যৌবনের তারুণ্যেকে।আজ আমরা এই যান্ত্রিক যুগে যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে হয়ে যাচ্ছি কায়িক শ্রম মুক্ত। আমরা আসক্ত হয়ে পড়ছি তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ায় এক মায়াময় অদৃশ্য জালে।এই তথ্যপ্রযুক্তির জাল ধীরে ধীরে আমাদেরকে গ্রাস করে নিচ্ছে।আমাদের থেকে কেড়ে নিচ্ছে আমাদের রঙিন শৈশব,কৈশোর তারুন্যের দিনগুলোকে।আমরা হয়ে যাচ্ছি ভালবাসাহীন,মমতাহীন এক আজব ধরনের যান্ত্রিক মানুষ।আমাদের ভিতর কাজ করছে না প্রাণচাঞ্চল্য, সহমর্মিতা,আবেগবোধ বা ভালোবাসা।আমরা দুই চোখ মেলিয়া দেখছি না আমাদের চারপাশের প্রাকৃতিক অপূর্ব সৌন্দর্য আজ আমরা সবাই ফেসবুক আর ইন্টারনেটের মায়াবি ছোবলে ধীরে ধীরে যন্ত্রে রূপান্তরিত হচ্ছি।এই সমস্যা আজ সারাবিশ্বের কোটি কোটি মানুষের।এর কারণ তাদের ফেসবুক আসক্তি। ফেসবুক তাদের গ্রাস করে ফেলেছে। অহরাত্রি মেতে থাকে এরা ফেসবুকে। হাজার হাজার পেজ, হাজার হাজার বন্ধু সামলানো তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! নিত্য নতুন বন্ধু জুটছে, কত দেশের কত মানুষের সঙ্গে চ্যাট করা যাচ্ছে, কত কিছু জানা যাচ্ছে, নিঃসঙ্গ সময়টা কত সুন্দর পার হচ্ছে এ রকম বহু কথামালা ফেসবুক নিয়ে বলা যায় এবং এগুলো সত্য। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এর নিরন্তর ব্যবহার। সময় নেই, অসময় নেই, সারাক্ষণ ফেসবুক নিয়ে মেতে থাকা এটাই খারাপ।
এই আসক্তি মানুষের কর্মঘণ্টাই শুধু নষ্ট করছে না, কর্মবিমুখও করে তুলছে। স্মার্টফোনের বোতামের মাঝেই যেন সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে জীবন। এই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কারণেই মানুষ হয়ে উঠছে অসামাজিক। ভোতা হয়ে যাচ্ছে চিন্তাশক্তি, যা আগামী পৃথিবীর জন্য আশঙ্কাজনক হতে পারে। অনেক গবেষক ও ডাক্তার বলছেন, ফেসবুকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের ঘুমের ব্যাঘাতসহ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি মানসিক ডিসঅর্ডারও হতে পারে। তাই ফেসবুকের আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরী। অনেকে বলবেন ফেসবুক আসক্তি দূর করার প্রকৃষ্ট উপায় অ্যাকাউন্ট ডেঅ্যাকটিভেট করে দেয়া। কিন্তু অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া কোন যৌক্তিক কাজ নয়। যেমন নয় মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলা। অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে আপনি আপনার পরিচিত অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলবেন। যুগের বহমানতায় ফেসবুক আজ গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। তাই এর ব্যবহার বন্ধ করা অনুচিতই বটে। শুধু দরকার আসক্তি কমানো। যারা ফেসবুকে আসক্ত, তারা স্বীকার করতেই চান না যে তারা আসক্ত। কিন্তু একটু বিবেচনা করে দেখুন আপনি দিনের কতটা সময় এতে ব্যয় করছেন। দু-তিন ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় করা কাম্য হতে পারে না। কিন্তু অনেকেই তেরো-চৌদ্দ ঘণ্টা এতে ব্যয় করছেন। স্মার্টফোনের কল্যাণে অনেকে তো নাওয়া খাওয়া ঘুম ভুলে এতেই মগ্ন থাকেন দিনরাত। এ রকম অবস্থাই আসক্তি। কোন কারণে একদিন ফেসবুক ব্যবহার না করতে পারলে অনেকেই পুরো মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন, এটাও প্রমাণ করে আপনি ফেসবুকে আসক্ত। প্রথমেই আপনাকে চিহ্নিত করতে হবে আপনি ফেসবুকে আসক্ত কিনা। এটিই হলো ফেসবুক আসক্তি দূরীকরণের প্রথম পদক্ষেপ। আপনার ঘনিষ্ঠজন যদি ফেসবুকে আসক্ত থাকেন, তবে তাকে বোঝান যে সে আসক্ত। ফেসবুকে আসক্ত কিনা তা যাচাই করার জন্য কিছু অনলাইন টেস্টও বের হয়েছে। প্রয়োজনে সেগুলোর মাধ্যমেই যাচাই করে নিন। একটু ভেবে দেখুন তো ফেসবুক কোন ক্ষতি করছে কিনা। কতটা সময় এতে ব্যয় করছেন, আর কতটা আউটপুট পাচ্ছেন, ভেবে দেখুন। এর ব্যবহারের রেট অব রিটার্ন কেমন, তা যাচাই করলেই বুঝতে পারবেন এর অতিরিক্ত ব্যবহার ক্যারিয়ারের কেমন বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। কিভাবে নষ্ট করেছে আপনার মূল্যবান সময়। দিনে কতবার লগ ইন, লগ আউট করছেন, কী কী কাজ করেছেন, এতে কতটা লাভ হয়েছে এবং এই সময়টাতে অধ্যয়ন কিংবা পেশাগত কাজ করলে কতটা লাভবান হতেন, তা একটু হিসেব করুন। একটু চোখ মুদে ভাবুন।
দেখবেন, সব একদম পরিষ্কার হয়ে যাবে আপনার কাছে। বই পড়া থেকে শুরু করে অনেক ভাল অভ্যাস, অনেক শখই ধামাচাপা পড়ে গেছে।
সময় নষ্ট হচ্ছে, পেশাগত ক্ষতি হচ্ছে। অধিকক্ষণ কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকায় চোখের ক্ষতি হচ্ছে। আর মনস্তাত্তিক ক্ষতি তো হচ্ছেই। ক্ষতির দীর্ঘ তালিকা দেখে টনক নড়ছে, ঠিক না? মাথা চাপড়িয়ে, হা-হুতাশ করার দরকার নেই। এবার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ফেসবুক ব্যবহারকে নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্য নিয়ে আনুন, রশি টেনে ধরুন। দেখবেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহার ঘনিষ্ঠজনরা কেমনভাবে নিচ্ছে তা জানার চেষ্টা করুন। আপনি আপনার পরিবার পরিজনকে পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে ফেসবুকে মেতে রয়েছেন, তাদের প্রতি এটা অবহেলা কি নয়? তাদের সময় না দিয়ে সর্বক্ষণ ফেসবুক উপভোগ করা কী চরম স্বার্থপরতা নয়? এ কি যুক্তিসঙ্গত। ভেবে দেখুন। যদি ভাবতে পারেন, যদি উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে এমনিতেই কমে যাবে আপনার ফেসবুক আসক্তি। তাই ভাবুন এবং উপলব্ধি করুন ফেসবুকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে আপনার ঘনিষ্ঠজনের অনুভূতি। ফেসবুক ব্যবহারের সময়সীমা রক্ষা করার জন্য টাইমার ব্যবহার করতে পারেন। টাইমার সফটওয়্যার কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোনে ইনস্টল করে ফেলুন কিংবা অন্য কোন টাইমার ব্যবহার করুন। যতটুকু সময় ফেসবুকের জন্য বরাদ্দ, ঠিক ততটুকু ব্যবহার করতে সাহায্য করবে টাইমার। এটি বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুক লগআউট করে উঠে পড়ুন। কোন দ্বিধা, ধানাই পানাই না করেই উঠে পড়ুন। জানি ফেসবুক ছাড়তে বেজায় কষ্ট হবে। তবু মাথাচাড়া দিয়ে মনে জোর এনে উঠে পড়ুন। অনেকের ঘণ্টায় ঘণ্টায় স্ট্যাটাস না দিলে ভালই লাগে না। এটা অন্যরা কিন্তু ভাল চোখে নেয় না, তা কি আপনি জানেন? সারাদিনের মনের কথা একটি স্ট্যাটাসেই দিয়ে দিননা। এতে বার বার ফেসবুকে বসার পরিমাণও কমবে। আবার অন্যের বিরক্তির উদ্রেগ করবে না। অনেকেই অপ্রয়োজনীয় অনেক পেজে লাইক দেন। এতে অপ্রয়োজনীয় নিউজ ফিডে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফেসবুক থেকে আনলাইক করে দিন অপ্রয়োজনীয় পেজ। দেখবেন, এতে অনেক সময় সাশ্রয় ঘটবে। ই-মেইল নটিফিকেশন বন্ধ করে দিন। এটি চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে যাবে ফেসবুকের কাছে। মানে বলতে চাচ্ছি, ফেসবুক লগ-ইন করার তাগিদ সৃষ্টি করবে মাঝে। ই-মেইল নটিফিকেশনকে অনেকে তাই ছোট লাল শয়তান বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। কে কখন কি করল, কে কোথায় লাইক দিল, কখন কি কমেন্ট করল তার সবই জানার দরকার আছে কি? না নেই। তাই ই-মেইল নটিফিকেশন অপশনটি বন্ধ করে দিন। দেখবেন ফেসবুকে ঢোকার প্রবণতা অনেক কমে গেছে। যাদের সঙ্গে আপনার ভাল জানাশোনা নেই তাদের কী আপনার বন্ধু বানানো খুব জরুরি? বেশি বন্ধু হলে কাছের বন্ধুদের কথা অনেক সময় মিস করে ফেলেন, তাই এত হাজার হাজার বন্ধু করা থেকে বিরত থাকুন, আর বেছে বেছে অপ্রয়োজনীয় বন্ধুদের ছাঁটাই করে ফেলুন। বন্ধুর মতো বন্ধু অল্প কয়জন থাকলেই হয়, তাতো আপনি ভাল করেই জানেন। সপ্তাহের একটি দিনকে ফেসবুক মুক্ত দিন হিসেবে ঘোষণা করে দিন না। দেখবেন, ফেসবুক আসক্তি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসছে। ভাবছেন, এতে ফেসবুক বন্ধুরা খুঁজে না পেয়ে রাগ করবে। তা যাতে তারা না করে, এজন্য আগেই একটি স্ট্যাটাস দিয়ে দিন যে, অমুক দিন আপনার ফেসবুকহীন দিবস। ফেসবুকে এত অপশন যে কিভাবে সময় কেটে যায়, তা টেরই পাওয়া যায় না। ভিডিও গেমসসহ আজব অনেক কান্ড কারখানার লিঙ্ক ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া যায়। আর তাতে মত্ত হয়ে পড়লে সময়ের হিসেব থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। তাই যথাসম্ভব চেষ্টা করুন এসব লিঙ্কে প্রবেশ না করতে। মনে রাখবেন, এ এক গোলকধাঁধা। এতে ঢুকলে বের হওয়া মেলা কষ্টের। ভাবার চেষ্টা করুন, জীবন ফেসবুকের ওপর নির্ভরশীল নয়। কোন অভ্যাসের দাস নন। ফেসবুক জীবনকে এককেন্দ্রিক করে দিচ্ছে, তা কেন হতে দিবেন বলুন। শুধু দৃঢ় প্রতিজ্ঞাই পারে ফেসবুক আসক্তিকে দূর করতে। অবশ্যই ফেসবুক ব্যবহার করবেন। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। এতো নিঃসঙ্গ সময়ের সঙ্গী। এর মাধ্যমে কত হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে খুঁজে পেয়েছেন, তো এর থেকে কেন একেবারে দূরে থাকবেন। এ সিদ্ধান্তও ঠিক হবে না।
তথ্য প্রযুক্তির যান্ত্রিকতার এই যুগে আমরা হারিয়ে ফেলছি সুন্দর পরিবেশ।আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের শৈশব,আমাদের কৈশোর এবং আমাদের যৌবনের তারুণ্যেকে।আজ আমরা এই যান্ত্রিক যুগে যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে হয়ে যাচ্ছি কায়িক শ্রম মুক্ত। আমরা আসক্ত হয়ে পড়ছি তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ায় এক মায়াময় অদৃশ্য জালে।এই তথ্যপ্রযুক্তির জাল ধীরে ধীরে আমাদেরকে গ্রাস করে নিচ্ছে।আমাদের থেকে কেড়ে নিচ্ছে আমাদের রঙিন শৈশব,কৈশোর তারুন্যের দিনগুলোকে।আমরা হয়ে যাচ্ছি ভালবাসাহীন,মমতাহীন এক আজব ধরনের যান্ত্রিক মানুষ।আমাদের ভিতর কাজ করছে না প্রাণচাঞ্চল্য, সহমর্মিতা,আবেগবোধ বা ভালোবাসা।আমরা দুই চোখ মেলিয়া দেখছি না আমাদের চারপাশের প্রাকৃতিক অপূর্ব সৌন্দর্য আজ আমরা সবাই ফেসবুক আর ইন্টারনেটের মায়াবি ছোবলে ধীরে ধীরে যন্ত্রে রূপান্তরিত হচ্ছি।এই সমস্যা আজ সারাবিশ্বের কোটি কোটি মানুষের।এর কারণ তাদের ফেসবুক আসক্তি। ফেসবুক তাদের গ্রাস করে ফেলেছে। অহরাত্রি মেতে থাকে এরা ফেসবুকে। হাজার হাজার পেজ, হাজার হাজার বন্ধু সামলানো তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! নিত্য নতুন বন্ধু জুটছে, কত দেশের কত মানুষের সঙ্গে চ্যাট করা যাচ্ছে, কত কিছু জানা যাচ্ছে, নিঃসঙ্গ সময়টা কত সুন্দর পার হচ্ছে এ রকম বহু কথামালা ফেসবুক নিয়ে বলা যায় এবং এগুলো সত্য। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এর নিরন্তর ব্যবহার। সময় নেই, অসময় নেই, সারাক্ষণ ফেসবুক নিয়ে মেতে থাকা এটাই খারাপ।
এই আসক্তি মানুষের কর্মঘণ্টাই শুধু নষ্ট করছে না, কর্মবিমুখও করে তুলছে। স্মার্টফোনের বোতামের মাঝেই যেন সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে জীবন। এই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কারণেই মানুষ হয়ে উঠছে অসামাজিক। ভোতা হয়ে যাচ্ছে চিন্তাশক্তি, যা আগামী পৃথিবীর জন্য আশঙ্কাজনক হতে পারে। অনেক গবেষক ও ডাক্তার বলছেন, ফেসবুকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের ঘুমের ব্যাঘাতসহ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি মানসিক ডিসঅর্ডারও হতে পারে। তাই ফেসবুকের আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরী। অনেকে বলবেন ফেসবুক আসক্তি দূর করার প্রকৃষ্ট উপায় অ্যাকাউন্ট ডেঅ্যাকটিভেট করে দেয়া। কিন্তু অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া কোন যৌক্তিক কাজ নয়। যেমন নয় মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলা। অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে আপনি আপনার পরিচিত অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলবেন। যুগের বহমানতায় ফেসবুক আজ গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। তাই এর ব্যবহার বন্ধ করা অনুচিতই বটে। শুধু দরকার আসক্তি কমানো। যারা ফেসবুকে আসক্ত, তারা স্বীকার করতেই চান না যে তারা আসক্ত। কিন্তু একটু বিবেচনা করে দেখুন আপনি দিনের কতটা সময় এতে ব্যয় করছেন। দু-তিন ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় করা কাম্য হতে পারে না। কিন্তু অনেকেই তেরো-চৌদ্দ ঘণ্টা এতে ব্যয় করছেন। স্মার্টফোনের কল্যাণে অনেকে তো নাওয়া খাওয়া ঘুম ভুলে এতেই মগ্ন থাকেন দিনরাত। এ রকম অবস্থাই আসক্তি। কোন কারণে একদিন ফেসবুক ব্যবহার না করতে পারলে অনেকেই পুরো মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন, এটাও প্রমাণ করে আপনি ফেসবুকে আসক্ত। প্রথমেই আপনাকে চিহ্নিত করতে হবে আপনি ফেসবুকে আসক্ত কিনা। এটিই হলো ফেসবুক আসক্তি দূরীকরণের প্রথম পদক্ষেপ। আপনার ঘনিষ্ঠজন যদি ফেসবুকে আসক্ত থাকেন, তবে তাকে বোঝান যে সে আসক্ত। ফেসবুকে আসক্ত কিনা তা যাচাই করার জন্য কিছু অনলাইন টেস্টও বের হয়েছে। প্রয়োজনে সেগুলোর মাধ্যমেই যাচাই করে নিন। একটু ভেবে দেখুন তো ফেসবুক কোন ক্ষতি করছে কিনা। কতটা সময় এতে ব্যয় করছেন, আর কতটা আউটপুট পাচ্ছেন, ভেবে দেখুন। এর ব্যবহারের রেট অব রিটার্ন কেমন, তা যাচাই করলেই বুঝতে পারবেন এর অতিরিক্ত ব্যবহার ক্যারিয়ারের কেমন বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। কিভাবে নষ্ট করেছে আপনার মূল্যবান সময়। দিনে কতবার লগ ইন, লগ আউট করছেন, কী কী কাজ করেছেন, এতে কতটা লাভ হয়েছে এবং এই সময়টাতে অধ্যয়ন কিংবা পেশাগত কাজ করলে কতটা লাভবান হতেন, তা একটু হিসেব করুন। একটু চোখ মুদে ভাবুন।
দেখবেন, সব একদম পরিষ্কার হয়ে যাবে আপনার কাছে। বই পড়া থেকে শুরু করে অনেক ভাল অভ্যাস, অনেক শখই ধামাচাপা পড়ে গেছে।
সময় নষ্ট হচ্ছে, পেশাগত ক্ষতি হচ্ছে। অধিকক্ষণ কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকায় চোখের ক্ষতি হচ্ছে। আর মনস্তাত্তিক ক্ষতি তো হচ্ছেই। ক্ষতির দীর্ঘ তালিকা দেখে টনক নড়ছে, ঠিক না? মাথা চাপড়িয়ে, হা-হুতাশ করার দরকার নেই। এবার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ফেসবুক ব্যবহারকে নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্য নিয়ে আনুন, রশি টেনে ধরুন। দেখবেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহার ঘনিষ্ঠজনরা কেমনভাবে নিচ্ছে তা জানার চেষ্টা করুন। আপনি আপনার পরিবার পরিজনকে পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে ফেসবুকে মেতে রয়েছেন, তাদের প্রতি এটা অবহেলা কি নয়? তাদের সময় না দিয়ে সর্বক্ষণ ফেসবুক উপভোগ করা কী চরম স্বার্থপরতা নয়? এ কি যুক্তিসঙ্গত। ভেবে দেখুন। যদি ভাবতে পারেন, যদি উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে এমনিতেই কমে যাবে আপনার ফেসবুক আসক্তি। তাই ভাবুন এবং উপলব্ধি করুন ফেসবুকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে আপনার ঘনিষ্ঠজনের অনুভূতি। ফেসবুক ব্যবহারের সময়সীমা রক্ষা করার জন্য টাইমার ব্যবহার করতে পারেন। টাইমার সফটওয়্যার কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোনে ইনস্টল করে ফেলুন কিংবা অন্য কোন টাইমার ব্যবহার করুন। যতটুকু সময় ফেসবুকের জন্য বরাদ্দ, ঠিক ততটুকু ব্যবহার করতে সাহায্য করবে টাইমার। এটি বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুক লগআউট করে উঠে পড়ুন। কোন দ্বিধা, ধানাই পানাই না করেই উঠে পড়ুন। জানি ফেসবুক ছাড়তে বেজায় কষ্ট হবে। তবু মাথাচাড়া দিয়ে মনে জোর এনে উঠে পড়ুন। অনেকের ঘণ্টায় ঘণ্টায় স্ট্যাটাস না দিলে ভালই লাগে না। এটা অন্যরা কিন্তু ভাল চোখে নেয় না, তা কি আপনি জানেন? সারাদিনের মনের কথা একটি স্ট্যাটাসেই দিয়ে দিননা। এতে বার বার ফেসবুকে বসার পরিমাণও কমবে। আবার অন্যের বিরক্তির উদ্রেগ করবে না। অনেকেই অপ্রয়োজনীয় অনেক পেজে লাইক দেন। এতে অপ্রয়োজনীয় নিউজ ফিডে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফেসবুক থেকে আনলাইক করে দিন অপ্রয়োজনীয় পেজ। দেখবেন, এতে অনেক সময় সাশ্রয় ঘটবে। ই-মেইল নটিফিকেশন বন্ধ করে দিন। এটি চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে যাবে ফেসবুকের কাছে। মানে বলতে চাচ্ছি, ফেসবুক লগ-ইন করার তাগিদ সৃষ্টি করবে মাঝে। ই-মেইল নটিফিকেশনকে অনেকে তাই ছোট লাল শয়তান বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। কে কখন কি করল, কে কোথায় লাইক দিল, কখন কি কমেন্ট করল তার সবই জানার দরকার আছে কি? না নেই। তাই ই-মেইল নটিফিকেশন অপশনটি বন্ধ করে দিন। দেখবেন ফেসবুকে ঢোকার প্রবণতা অনেক কমে গেছে। যাদের সঙ্গে আপনার ভাল জানাশোনা নেই তাদের কী আপনার বন্ধু বানানো খুব জরুরি? বেশি বন্ধু হলে কাছের বন্ধুদের কথা অনেক সময় মিস করে ফেলেন, তাই এত হাজার হাজার বন্ধু করা থেকে বিরত থাকুন, আর বেছে বেছে অপ্রয়োজনীয় বন্ধুদের ছাঁটাই করে ফেলুন। বন্ধুর মতো বন্ধু অল্প কয়জন থাকলেই হয়, তাতো আপনি ভাল করেই জানেন। সপ্তাহের একটি দিনকে ফেসবুক মুক্ত দিন হিসেবে ঘোষণা করে দিন না। দেখবেন, ফেসবুক আসক্তি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসছে। ভাবছেন, এতে ফেসবুক বন্ধুরা খুঁজে না পেয়ে রাগ করবে। তা যাতে তারা না করে, এজন্য আগেই একটি স্ট্যাটাস দিয়ে দিন যে, অমুক দিন আপনার ফেসবুকহীন দিবস। ফেসবুকে এত অপশন যে কিভাবে সময় কেটে যায়, তা টেরই পাওয়া যায় না। ভিডিও গেমসসহ আজব অনেক কান্ড কারখানার লিঙ্ক ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া যায়। আর তাতে মত্ত হয়ে পড়লে সময়ের হিসেব থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। তাই যথাসম্ভব চেষ্টা করুন এসব লিঙ্কে প্রবেশ না করতে। মনে রাখবেন, এ এক গোলকধাঁধা। এতে ঢুকলে বের হওয়া মেলা কষ্টের। ভাবার চেষ্টা করুন, জীবন ফেসবুকের ওপর নির্ভরশীল নয়। কোন অভ্যাসের দাস নন। ফেসবুক জীবনকে এককেন্দ্রিক করে দিচ্ছে, তা কেন হতে দিবেন বলুন। শুধু দৃঢ় প্রতিজ্ঞাই পারে ফেসবুক আসক্তিকে দূর করতে। অবশ্যই ফেসবুক ব্যবহার করবেন। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। এতো নিঃসঙ্গ সময়ের সঙ্গী। এর মাধ্যমে কত হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে খুঁজে পেয়েছেন, তো এর থেকে কেন একেবারে দূরে থাকবেন। এ সিদ্ধান্তও ঠিক হবে না।
কোন মন্তব্য নেই