টর ব্রাউজার আসলে কতটুকু নিরাপদ? তা পরিপূর্ণভাবে জানুন বিস্তারিত এই পোস্ট থেকে।

টর ব্রাউজার আসলে কতটুকু নিরাপদ? তা পরিপূর্ণভাবে জানুন বিস্তারিত এই পোস্ট থেকে।


যারা ডীপ ওয়েব, ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে হালকা একটুও জানেন, তাদেরই টর নেটওয়ার্ক সম্পর্কে শোনার কথা। প্রাথমিকভাবে টর নেটওয়ার্ক একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক সার্ভার; যা ইউএস নেভি দ্বারা উন্নয়নকৃত এবং বিশ্বব্যাপি ইউজারদের অনলাইনে তাদের পরিচয় লুকিয়ে রাখার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিলো। টর প্রোজেক্ট মূলত একটি অলাভজনক সংগঠন; যারা অনলাইন গোপনীয়তা টুল তৈরি করাকে গবেষণার মূল লক্ষ্য হিসেবে দেখে।
টর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার জন্য মূলত একটি ব্রাউজারের দরকার হয়, যার নাম টর ব্রাউজার। টর ব্রাউজার ফায়ারফক্স ব্রাউজারের উপর মডিফাই করা একটি ব্রাউজার, যেটা টর প্রজেক্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ডাউনলোড করা সম্ভব। ব্রাউজারটি জাস্ট আপনার সিস্টেমে ইন্সটল করার মাধ্যমেই আপনি এই নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড হয়ে পড়তে পারবেন, কোন আলাদা সেটিংস ঠিক করার প্রয়োজনীয়তা পড়বে না।
টর নেটওয়ার্কে আপনার অনলাইন পরিচয়কে ছদ্মবেশে বিভিন্ন টর সার্ভার দিয়ে এনক্রিপশন করিয়ে তারপরে সেই ট্র্যাফিককে নির্দিষ্ট স্থানে পাঠানো হয়; ফলে আপনার পরিচয় ট্র্যাক করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আজকের যেকোনো সাধারণ ব্রাউজারে ইনকগনিটো মুড বলে একটি ফিচার থাকে, আমরা মনে করি এটি ওপেন করে নেট সার্ফ করলে আমাদের পরিচয় গোপন থাকবে, আসলে এটি ঠিক না। এতে শুধু ব্রাউজারে আপনার ব্রাউজিং হিস্টরি সেভ হবে না, কিন্তু আপনার আইএসপি সবকিছু জানতে পারবে আপনি কোথায়, কখন এবং কি ভিজিট করছেন অনলাইনে।
টর কীভাবে কাজ করে?
সাধারণত আমরা ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য কি করি; যেকোনো পছন্দের ব্রাউজার ওপেন করে অ্যাড্রেস লিখে ঢুকে পড়ি। এরপরে আপনার রিকোয়েস্টটি আপনার কম্পিউটার থেকে আপনার আইএসপির কম্পিউটারে গিয়ে পৌঁছায় এবং আপনার আইএসপি আপনার রিকোয়েস্ট করা ওয়েব সার্ভারের কাছে পেজ চেয়ে অনুরোধ করে; একবার পেজটি পাওয়া গেলে সেটাকে আপনার কমিপউটার পর্যন্ত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এখানে কিছু ফ্যাক্ট লক্ষ্য করুন; আপনি কোন সাইট ভিজিট করতে চাচ্ছেন সেটা সর্বদা আপনার আইএসপি জানছে আবার আপনি যে সাইট ভিজিট করছেন সেই সাইটও আপনার কমিপউটার এবং আপনার আইএসপি সম্পর্কে জেনে যাচ্ছে। কেনোনা আপনার ভিজিট করা সাইটের কাছে আপনার আইপি অ্যাড্রেস চলে যাচ্ছে। তো এভাবেই অনলাইনে আমাদের পরিচয় খোলাসা হয়ে যায় এবং আমরা কি এক্টিভিটি দেখাচ্ছি সেটাও লুকিয়ে থাকে না।
শুধু এটুকুতেই কিন্তু শেষ নয়, আপনি যে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করছেন হতে পারে সে ওয়েবসাইটটি আপনার প্রত্যেকটি ইন্টারনেট কর্মকাণ্ড ট্র্যাক করার জন্য আপনার ব্রাউজারে কোন কুকিজ ছেঁড়ে দেয়। কোন কোন সাইট আপনার সেবার মান উন্নয়ন করতে আমার কোন সাইট আপনাকে উপযুক্ত বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্যও কুকিজ প্ল্যান্ট করে থাকে; যেমন— গুগল বা ফেসবুক সবাই বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য কুকিজ ব্যবহার করে। কিন্তু কিছু সাইট আবার আপনার সকল ডাটা চুরি করার জন্য আপনার ব্রাউজারে কুকিজ বসিয়ে দিতে পারে। তো বুঝতেই পারছেন ইন্টারনেটে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যগুলো কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।
এই অসুবিধা গুলো থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য এবং বিশেষ করে আপনাকে অনলাইন প্রাইভেসি প্রদান করার জন্য টর ব্রাউজার টর নেটওয়ার্ক-এর সাহায্যে কাজ করে থাকে। যখন আপনি টর ব্রাউজারে কোন অ্যাড্রেস লিখেন সেখানে প্রবেশ করার জন্য; ব্রাউজার আপনার ট্র্যাফিককে তত্ক্ষণাত্ এনক্রিপটেড করে দেয় এবং সেই ট্র্যাফিককে সরাসরি ওয়েব সার্ভারের কাছে না পৌছিয়ে বিভিন্ন টর সার্ভারের মধ্যদিয়ে নিয়ে যায়।
ধরুন আপনি বাংলাদেশ থেকে টর ব্যবহার করে সবুজ বাংলা ইউটিউব হেল্পলাইন গ্রুপটিকে ভিজিট করতে চাচ্ছেন, প্রথমে আপনার ট্র্যাফিককে এনক্রিপটেড করা হবে যাতে কেউ আপনার রিকোয়েস্ট পড়তে না পারে, তারপরে প্রথমে ধরুন অ্যামেরিকার সার্ভারে চলে যাবে সেখান থেকে ব্রাজিলের সার্ভারে যাবে, আবার ইন্ডিয়ান সার্ভার থেকে রাশিয়ান সার্ভার হয়ে তবেই নির্দিষ্ট ওয়েব সার্ভারের কাছে রিকোয়েস্টটি পৌঁছাবে। তো পদ্ধতিতে ঠিক কোন স্থান থেকে রিকোয়েস্টটি এসেছিলো সেটা ডিটেক্ট করা একেবারে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তবে এখানেও কিছু ফ্যাক্ট রয়েছে যেগুলো আপনার জানা প্রয়োজনীয়; সাধারন ইন্টারনেট ট্র্যাফিক এসএসএল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে ওয়েবসাইট এবং আপনার কম্পিউটারের মধ্যের ইন্টারনেট ট্র্যাফিককে এনক্রিপটেড করে রাখে। টর ব্রাউজারে প্রথমে আপনার ইন্টারনেট ট্র্যাফিককে এনক্রিপটেড করা হয় এবং সকল সার্ভারে এই ডাটাকে এনক্রিপ্ট করেই ট্র্যান্সমিট করানো হয়, কিন্তু ফাইনাল সার্ভার থেকে মানে যে সার্ভার থেকে ডাটাকে ফাইনালি টার্গেট ওয়েব সার্ভারের কাছে পাঠানো হয় সেখানে ডাটাকে ডিক্রিপ্ট করা হয় যদি ওয়েবসাইটটি এসএসএল ব্যবহার না করে (https)। আর ডিক্রিপ্টেড হওয়া নর্মাল ডাটা আপনার প্রাইভেসির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই টর ব্যবহার করলেও আপনি যদি https সাইট ভিজিট করেন শুধু তবেই আপনার ডাটা এন্ড টু এন্ড এনক্রিপটেড থাকবে।
টর সত্যিই কতোটা নিরাপদ?
উপরের লেখাগুলি পড়ে নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গেছেন, টর তখনোই সম্পূর্ণ সিকিউর হবে যখন এতে আপনি আরো বিষয়কে মাথায় রাখবেন। টরের যে ফাইনাল সার্ভার থেকে ওপেন ইন্টারনেটের কাছে রিকোয়েস্ট পাঠানো হয়, সেটাকে ট্র্যাক করা যেতে পারে বা মনিটর করা যেতে পারে। ফাইনাল সার্ভারটিকে এক্সিট নোড বলা হয়। সুতরাং যেমনটা আগেই বলেছি, অবশ্যই যে সাইটে আপনি ভিজিট করছেন, সেটা এসএসএল ব্যবহূত সাইট হতে হবে, না হলে আপনার ব্রাউজিং ডাটা লিক হয়ে যেতে পারে আপনাকে আপনাকে মনিটর করা যেতে পারে।
সাথে আপনার ব্রাউজারে যদি আলাদা কোন প্লাগইন ইন্সটল করেন বা কোন ওয়েবসাইটে ব্যবহার করা ম্যালিসিয়াস কোড বা জাভা স্ক্রিপ্ট আপনার তথ্য লিক করতে পারে। যদিও জাভা স্ক্রিপ্ট কোন সিকিউরিটি রিস্ক নয়, কিন্তু তারপরেও যেখানে কথা আসছে অ্যাননিমাস থাকার বা আইপি হাইড করে রাখার, সেখানে অবশ্যই জাভা স্ক্রিপ্ট বন্ধ থাকায় ভালো। আবার ব্রাউজারের সাথে থাকা ফ্ল্যাশ প্লেয়ার, অ্যাডোব রিডার বা অনলাইন ভিডিও প্লেয়ার আপনার আসল আইপি অ্যাড্রেস লিক করতে পারে ঐ ওয়েবসাইটটির কাছে।
ডাউনলোড টর ব্রাউজার।
আপনি অনেক সাইট থেকে এই টর ব্রাউজারকে ডাউনলোড করে ইন্সটল করতে পারেন, তবে আমি রিকোমেন্ড করবো অফিশিয়াল torproject.org থেকে সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করতে। অফিশিয়াল সাইটটি থেকে টর ব্রাউজারের অনেক ভাষা নির্বাচন করতে পারেন, আপনার ইচ্ছা মতো ভাষার একটি প্যাকেজ ডাউনলোড করে নিন। আপনার সুবিধার্থে, https://bit.ly/1dhroym এই লিঙ্ক ক্লিক করলেই সরাসরি ডাউনলোড পেজে চলে যাবেন। সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করার পরে অবশ্যই সেটিকে ইন্সটল করতে হবে। ইন্সটল করার সময় আপনার ইন্সটলেশন লোকেশনে একটি ফোল্ডার তৈরি হবে, যেখানে টরের প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো স্টোর হবে সফটওয়্যারটি রান হওয়ার জন্য। আলাদা সোর্স থেকে সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করলে হতে পারে হ্যাকার সেই ইন্সটল ফাইল মডিফাই করে সেখানে কোন ম্যালিসিয়াস কোড ইঞ্জেক্ট করে রেখেছে, যেটা আপনার প্রাইভেসি বা সিকিউরিটি নষ্ট করতে পারে।
রান টর ব্রাউজার।
টর ডাউনলোড এবং ইন্সটল প্রসেস শেষ করার পরে, এবার সময় এসেছে সফটওয়্যারটিকে রান করবার জন্য। সাধারণ যেকোনো সফটওয়্যারের মতো জাস্ট টর আইকনে ডাবল ক্লিক করার মাধ্যমেই সফটওয়্যারটি রান হয়ে যাবে। সফটওয়্যারটি ইন্সটল করার সময় কোন সেটিং পরিবর্তন করার দরকার নেই, জাস্ট সফটওয়্যারটির রেকমেন্ডেড সেটিং এ একে ইন্সটল করে ফেলুন। এবার সফটওয়্যারটি প্রথমে রান হয়ে টর নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্ট হওয়ার চেষ্টা করবে, আর আপনার সেটিং অনুসারে এটি নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড হয়ে যাবে। আপনার ইন্টারনেট স্পিড অনুসারে কানেক্ট হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে, একটু অপেক্ষা করায় ভালো। টর নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড হয়ে যাওয়ার পরে, ব্রাউজারটি রান হয়ে যাবে।
তো বন্ধুরা আরো অনেক কিছু বলতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু পোস্টটি আরো অনেক বড় হয়ে যাবে তাই আর বিস্তারিত এ ব্যাপারে আজ আর বললাম না। কারণ আপনাদের মাঝে অনেকেরই আমার কথাগুলোকে অতিরিক্ত কথা বলে মনে হয়। তা যাক যাই হোক, আপনাদের কেমন লাগলো আজকের এই পোস্টটি তা অবশ্যই আপনারা কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আর যদি ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন এবং এই পোস্টটাকে সর্বোচ্চ শেয়ার করার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ হাফেজ।

কোন মন্তব্য নেই

Goldmund থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.