আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি? আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ভবিষ্যৎ সম্ভাবণা ও বিপদ।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি? আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ভবিষ্যৎ সম্ভাবণা ও বিপদ।


আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বর্তমান বিশ্বের সবচাইতে বড় বিস্ময়কর শব্দ। বাংলাদেশে যখন সোফিয়া রোবটের আগমন হয় তখন কমবেশি সবাই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর নাম শুনেছেন। আপনি কি জানেন গুগল সার্চ করতে গিয়ে যখন আমরা বানান ভুল করি, তারপরও কিভাবে সঠিক ফলাফল প্রদর্শন করে গুগল? কাজটা হয় কিন্তু এই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে।

এছাড়াও, আপনি গুগলে কোন কিছু সার্চ দেয়ার পর যখন কোনও ওয়েবসাইট ভিজিট করেন, ওই ওয়েবসাইটে ঠিক ওই রকম অ্যাডই শো করা যা আপনি সার্চ দিয়ে খুঁজেছিলেন। অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিনের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স আপনাকে মনিটর করছে, আপনার প্রয়োজন বুঝে নিচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী আপনাকে সার্ভিস দিচ্ছে।

আবার আপনার মেইলের কথা ভাবুন। প্রতিদিনই আপনার ইনবক্সের স্প্যাম ফোল্ডারে প্রচুর মেইল জমা হচ্ছে যে মেইলগুলো আপনার জন্যে কোন কাজের নয়, বরং ক্ষতিকর। মেইলিং সিস্টেম আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে ঠিকই বুঝতে পারে কোন মেইলটি আপনার জন্যে দরকারি আর কোনটি ক্ষতিকর বা স্ম্যাম।

আবার আপনি ইউটিউবে যে ক্যাটেগরির ভিডিও দেখেন, খেয়াল করে দেখবেন যে, পরবর্তীতে আপনি যখনই ইউটিউবে প্রবেশ করবেন, আপনাকে ঠিক ওই রকম ভিডিওই সাজেস্ট করা হচ্ছে। প্রশ্ন- কিভাবে সম্ভব হচ্ছে? উত্তর- আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে।

এই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে চলছে প্রচুর গবেষণা। কিন্তু তারপরও বিশ্বের বিখ্যাত সব বিজ্ঞানী-প্রযুক্তিবিদ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যাপারে বলছেন এর প্রতিক্রিয়া হবে মানুষের উন্নতির সর্বোচ্চ পর্যায় অথবা মানুষের ধ্বংসের প্রধান কারণ।

আর্টিফিসিয়ার ইন্টেলিজেন্সের প্রতিক্রিয়ায় কি হবে আমাদের ভবিষ্যৎ? আমরা কি অদূর ভবিষ্যতে আরো বেশি উন্নত হব, নাকি নিজেদেরকে নিয়ে যাবো ধ্বংসের দোরগোড়ায়। জানতে হলে, পুরো লেখাটি পড়ে যেতে হবে যার শুরুতেই আমরা বোঝার চেষ্টা করবো আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স আসলে কি, কত ধরণের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স রয়েছে।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি?

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা AI বাংলায় অনুবাদ করলে হয় ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’। সাধারণভাবে মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজনীয় কাজগুলি করতে সক্ষম কম্পিউটার বা মেশিনকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলা হয়।

বর্তমান সময়ে কম্পিউটার বা মেশিন কেবল মানুষ যে কমান্ড বা নির্দেশ দেয় সেই মোতাবেক কাজ করতে পারে। এর বাইরে কম্পিউটার বা মেশিন নিজে নিজে কোনো কাজ করতে পারে না। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে কম্পিউটার বা মেশিন নিজে নিজেই কাজ করতে, চিন্তা করতে কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কত প্রকার ও কি কি?

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথা:

১. উইক এআই (Narrow AI): এই ইন্টেলিজেন্স শুধুমাত্র নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কাজ করতে পারে। বর্তমানে আমরা এই ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করছি।২. স্ট্রং এআই  (Artificial General Intelligence): মেশিন বা কম্পিউটার যখন মানুষের মতো কাজ করতে পারবে তখন তাকে বলা হবে স্ট্রং এআই।৩. সিঙ্গুলারিটি (Super Intelligence): এটা হল এমন একটা ইন্টেলিজেন্স যা কিনা সবচেয়ে প্রতিভাধর মানুষের ক্ষমতাকেও অতিক্রম করবে।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ইতিহাস।

একাডেমিকভাবে বলতে গেলে, টুরিংয়ের মৃত্যুর দুই বছর পর আতঙ্কের ৫০-এর দশকে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মূল ধারণাটি চালু হয়েছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্র যা আমরা জানি তা ১৯৪০ সালে শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

এই সময় গণিতবিদ অ্যালান টুরিং এবং নিউরোলজিস্ট গ্রে ওয়াল্টার বুদ্ধিমান মেশিন ও এর বিভিন্ন সম্ভাবণা সম্পর্কে ধারণা দেন। এরপর কম্পিউটার বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থি এই শব্দটিকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নামে অভিহিত করেছিলেন।

১৯৭০-এর দশকে AI প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিল এবং এই সময় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের খুব সামান্য উন্নয়ন ঘটেছে। কিন্তু ১৯৮০ সালের প্রথম দিকে, AI বাণিজ্যিক প্রকল্পগুলির জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে শুরু করে।

১৯৯০-এর দশকে AI একটি ক্ষুদ্র বিপ্লব ছিল। এই ক্ষেত্রের অনেকেই মিনস্কির AI পদ্ধতির পথ পরিত্যাগ করে এবং এর পরিবর্তে রডনি ব্রুকস দ্বারা পরিচালিত পদ্ধতি গ্রহণ করে। মিনস্কির পদ্ধতি হল ধারণাশক্তি সম্পন্ন আলগোরিদিমগুলির সাথে প্রি-প্রোগ্রামিং একটি কম্পিউটারের।

অপরদিকে ব্রুকসের পরামর্শ দিয়েছেন এমন একটি নিউরোলজি নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্যে যা মানব মস্তিষ্কের কোষগুলির মতো কাজ করবে। এমনকি, মানুষের মত অভিজ্ঞতা ও সময়ের সাথে নতুন নতুন আচরণ শিখবে। যদিও ব্রুকস নিজেকে এর সাথে জড়িত করতে পারেননি, তবে ভবিষ্যতের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির পথকে সহজ করে দিয়েছেন তিনি।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর গুরুত্ব।

বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন প্রায় সকল কাজে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সির ব্যবহার হয়। উপরের চার্টটি দেখে আশা করি বুঝে গেছেন বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর গুরুত্ব কতটা বেশি ।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মেশিনগুলো নিজে সচেতন হতে পারবে অর্থাৎ সে তার অতীতের ভুলগুলির ডেটা সংগ্রহ করতে পারবে। তাই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি এবং তীব্রতা হ্রাস পাবে।

যেহেতু মেশিনগুলোকে তৈরি করা হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং শক্তিশালী ধাতু দিয়ে, ফলে অবিরামভাবে কঠোর পরিশ্রম এবং খনি থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের মত কাজগুলো এরা নিজেরাই করতে পারবে।

বড় আকারের ডাটা সংরক্ষণ ও তাকে সুবিন্যস্তভাবে সাজানো এবং সেখান থেকে মানুষের সাহায্য ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য দেখানোর কাজটাও খুব সহজেই করা যাবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে।

মানুষকে কাজ করানোর জন্য মজুরি প্রদান করতে হয় কিন্তু মেশিনকে কাজ করানোর জন্য কোন মজুরি প্রদান করতে হয় না। এছাড়া মেশিনে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় নেই, সে সারাক্ষণ কঠোর পরিশ্রম করতে পারে। যার ফলে অটোমেশনে (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স+মেশিন) পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি হ্রাস করবে পণ্য উৎপাদনের ব্যয়।

আর এই কারণে অনেকেই মনে করে ভবিষ্যতে মানুষকে অনেক কিছু আর অর্থ দিয়ে ক্রয় করতে হবে না এবং কিছু কিছু পন্য মানুষের জন্য ফ্রি হয়ে যাবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রায় সব ক্ষেত্রেই মানুষকে সাহায্য করছে এবং এভাবে ভবিষ্যতে আরো উন্নততর হয়ে উঠবে, সেই সাথে বৃদ্ধি পাবে এর গুরুত্ব।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কোথায় ও কিভাবে ব্যবহার করা হয়।

কোন সমস্যা সমাধানের জন্য এআই প্রথমে মানুষের দেওয়া তথ্যগুলো সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে যখন কোন নতুন তথ্য আসে, তখন নতুন তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষিত তথ্যের সাথে মিলিয়ে সঠিক তথ্য প্রদর্শন করে।

আশা করি, কিছু বুঝেননি। একটা উদাহরণ দেই, আমরা ছোটবেলা প্রথমে বাংলা বর্ণ মুখস্থ করে আমাদের ব্রেইনে সংরক্ষণ করে রেখেছি এবং পরবর্তীতে যখন আমরা কোন বাক্য বানান করার প্রয়োজন হত তখন আমাদের ব্রেইনে থাকা বর্ণের সাথে মিলিয়ে খুব সহজেই বানান করতে পারতাম। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এইভাবেই কাজ করে।

আজকের দিনে আমরা প্রতিনিয়ত যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, তার প্রায় সব কিছুতেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার রয়েছে। আমরা যখন মোবাইলে দাবা কিংবা লুডু খেলি, তখন দেখা যায় যে আমাদের অপর পক্ষে থাকে রোবট। এই রোবটটা খেলে মূলত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে। ইউটিউবে যখন আমরা রান্নার ভিডিও দেখি, তখন কিন্তু আমাদের সাজেশন সাইডে রান্নার ভিডিওগুলোই আসে, এই কাজগুলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবণা।

Katja Grace, John Salvatier, Allan Dafoe, Baobao Zhang এবং Owain Evans আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর উপর একটি বৈশ্বিক জরিপ চালান। উক্ত প্রতিবেদনটি আপনি এই Arxiv ওয়েবসাইটে পাবেন। এই প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আগামী ৪৫ বছরের মধ্যে মানুষের অর্ধেক কাজ স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাবে। এমনকি, আগামী ১২০ বছরের মধ্যে মানুষের সকল কাজ স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাবে। আর এই স্বয়ংক্রিয় কাজগুলো সম্পন্ন হবে কৃত্রিম বুদ্ধি সম্পন্ন রোবট, মেশিন অথবা কম্পিউটার দ্বারা।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের অগ্রগতি যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামরিক খাত মোটকথা সকল ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক জীবনে রূপান্তরিত করবে। এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আগামী ৪০ বছরের মধ্যে নিম্নলিখিত কাজের ক্ষেত্রে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষকে পিছনে ফেলে দেবে।

ভাষা অনুবাদের ক্ষেত্রে মানুষকে পেছনে ফেলে দিবে ২০২৪ সালের মধ্যে। স্কুলের রচনা লেখার ক্ষেত্রে মানুষকে পেছনে ফেলে দিবে ২০২৬ সালের মধ্যে। ট্রাক চালক হিসেবে পেছনে ফেলে দিবে ২০২৭ সালের মধ্যে।খুচরা ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পেছনে ফেলে দিবে ২০৩১ সালের মধ্যে।বেস্ট সেলিং বই লেখার ক্ষেত্রে মানুষের থেকে আরও বেশি অগ্রগামী হয়ে যাবে ২০৫০ সালের মধ্যে।শল্যচিকিৎসক হিসাবে কাজ করতে পারবে ২০৫০ সালের মধ্যে।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কেন বিপদজনক হতে পারে?

সত্যিকারের AI এর ব্যাপারে ব্রিটেনের বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছিলেন,

“আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের পূর্ণাঙ্গ সফলতা মানব জাতিকে পুরোপুরি ধ্বংশ করে দেবে।”

অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন তিনি মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য এই কথা বলেছেন। তার বক্তব্যে তিনি শেষ পর্যন্ত এই হুঁশিয়ারি বারবার দিয়ে গিয়েছেন। তিনি বারবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, AI ইতি টানতে পারে মানব সভ্যতার, যদি না এটি যথাযথভাবে মানুষের নিয়ন্ত্রণে রাখা না যায়।

কারণ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে চালিত অটোমেটিক তথা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র বা রোবট মানুষের জন্য অনেক বড় হুমকি। এটাই হতে পারে মানব ইতিহাসের সর্বশেষ যুদ্ধ বা সর্বশেষ ঘটনা।

AI নিয়ে শুধু স্টিফেন হকিং নয়, এলন মাস্ক, স্টিভ উজনিয়াক ও বিল গেটসের মতো বড় বড় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদগন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সম্প্রতি কিলার রোবট নিয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কিলার রোবট আসলে মানুষের কোনো সাহায্য ছাড়া শত্রুপক্ষকে চিহ্নিত করে তার উপর আঘাত হানতে পারে। যদিও বর্তমানে এই ধরণের কোন অস্ত্রের অস্তিত্ব নাই। কিন্তু আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের অগ্রগতির দ্বারা এ ধরনের অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।

আর যেহেতু বর্তমানে এখনো দুর্বলদের উপর সাম্রাজ্যবাদীদের আঘাত থেমে নেই। তাই অদূর ভবিষ্যতে সাম্রাজ্যবাদীরা কিলার রোবট আবিষ্কারের জন্য চেষ্টা করবে না, এ রকম ভাবনা একদম হেসে উড়িয়ে দেওয়ার মত না। আবার এই মেশিন বা রোবট যে আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বা আমাদের কথা শুনবে এর কোন নিশ্চয়তা নেই। যেখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের সৃষ্টিকর্তার কথার কথা মান্য করি না।

অপর দিকে অ্যাপল এর সাবেক সিইও John Sculley বলেন, অনেক ক্ষেত্রে, মানুষ দ্বারা করা কাজগুলি অটোমেশনের মাধ্যমে করা সম্ভব হবে। আমার কাছে এর উত্তর নেই। এটি সমাজের আরো বিপজ্জনক সমস্যাগুলির মধ্যে একটি।”

তার কথার দ্বারা এটা খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে, ভবিষ্যতের চাকুরির বাজার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত হবে রোবটের ধারা। এটা হতে পারে আমাদের মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আবার এটাও হতে পারে আমাদের মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বেশি শান্তির। কারণ, এই সময় আমাদের আর কোন কাজ করতে হবে না।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স যেভাবে ধ্বংস করবে পুঁজিবাদ।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, যে উৎপাদন ব্যবস্থায় উৎপাদনের সকল উপকরণ ব্যক্তির নিজস্ব মালিকানায় থাকে এবং সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের সুযোগ থাকে, তাকে পুঁজিবাদ বলা হয়। পুঁজিবাদ এমন একটি অর্থ ব্যবস্থা যেখানে শিল্পপতিরা তাদের পণ্য বিক্রির জন্য যে কোনো ঘৃণিত কাজ করতে রাজি। এমনকি “সাম্রাজ্যবাদ”, “উপনিবেশবাদ”, “ফ্যাসিজম”, “নাৎসিবাদ” এর মত বিষয়গুলি এই পুঁজিবাদ থেকে উৎপত্তি। এখন প্রশ্ন হল এই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি পারবে পুঁজিবাদকে চিরতরে দমন করতে নাকি উল্টো পুঁজিবাদকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স?

Calum Chace তার বই “Artificial Intelligence and the Two Singularities” তে উল্লেখ করেন, “পূর্ববর্তী শিল্প বিপ্লবের সময়ে সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতির সঙ্গে মানুষের যান্ত্রিক দক্ষতা প্রতিস্থাপন হয়েছিল। কিন্তু এই সময় এটি প্রতিস্থাপন করছে আমাদের মানসিক ফাংশনের সৃজনশীলতা, অনুমান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে। যেটা মানব ইতিহাসের পূর্বে কখনো ঘটেনি এবং কেউ জানে না ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে।”

তিনি আরো বলেছেন, “অনেক মানুষ ভাবছে যেহেতু অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি, তাই ভবিষ্যতেও ঘটবে না। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে সবকিছু এখন ভিন্ন।”

একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা আরো সহজে বুঝে আসবে।

যদি রোবট অথবা মানুষের দ্বারা আলাদা আলাদা কারখানা পরিচালিত হয়। তাহলে রোবটের দ্বারা পরিচালিত কারখানাতে খাদ্য তৈরিতে অনেক কম খরচ হবে। কারণ, এখানে প্রশাসনিক কর্মচারী, অপারেটর, সিকিউরিটি এবং যন্ত্রপাতি সবকিছু শুধু একবার ক্রয় করতে হবে।

কিন্তু মানুষের দ্বারা পরিচালিত কারখানায় প্রত্যেকটির জন্য আলাদা আলাদা নিয়মিত খরচ করতে হবে। যার ফলে এর ব্যয় অবশ্যই বেশি হবে। আবার মানুষ স্বাভাবিকভাবে কম কম খরচের পণ্যটি কিনতে চাইবে, যার ফলে রোবটের কারখানার গুরুত্বই বেশি হবে।

অবশ্য এর ফলে বিপুল মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হবে এবং দরিদ্র মানুষেরা খাদ্য ক্রয় করার সামর্থ পাবে। এখন প্রশ্ন হলো, যদি সবকিছু রোবটের আয়ত্তে চলে যায়, তাহলে মানুষ কি করবে? যদি তাদের চাকুরি না থাকে, তাহলে মানুষ ক্রয় করার জন্য অর্থ কোথায় পাবে?

আবার, মেশিনের রাজত্ব আমাদের জন্য আরামদায়ক হতে পারে অর্থাৎ আমাদের আর কোন কিছু ক্রয় করার প্রয়োজন হবে না।

অন্যদিকে, এটাও হতে পারে ভবিষ্যতে মানুষ রোবটিক শ্রমশক্তির দ্বারা পরিচালিত হবে। এই রোবটগুলো হয়তো পরিচালিত হবে ১% উচ্চশ্রেণীর ধারা। পরিশেষে হয়তো ঘুরে ফিরে দেখা যাবে, পৃথিবী আবার সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে কিংবা তার উল্টো হবে।

শেষ কথা।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স হতে পারে আমাদের জন্য অনেক বড় সম্ভাবণা। আবার হতে পারে আমাদের মানবজাতির ধ্বংসের প্রধান কারণ। তবে ভালো কিংবা খারাপ দুটোই নির্ভর করে মানুষের উপর। তাই এখনই যদি আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যাপারে সতর্ক না হই, তবে ভবিষ্যতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ক্ষমতা কোনো সন্ত্রাসী কিংবা খারাপ মানুষের হাতে পড়ে গোটা পৃথিবীটা ধ্বংসের সম্মুখীন হয়ে যেতে পারে।

২টি মন্তব্য:

Goldmund থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.