প্রতিদিন ব্যবহার করার পরেও এদের গোপন রহস্য গুলো আপনারা আগে জানতেন না!

প্রতিদিন ব্যবহার করার পরেও এদের গোপন রহস্য গুলো আপনারা আগে জানতেন না!


আমরা প্রযুক্তির এক মডার্ন যুগে বাস করছি, যেখানে প্রত্যেকটি জিনিষ মডার্ন টেকের মাধ্যমে রিপ্লেসড হয়ে গেছে। হাতের ঘড়ি আর শুধুই সময় দেখায় না,সাথে এতে রয়েছে অসাধারণ হাইটেক কিছু ফিচার যেগুলো মাত্র কয়েক বছর আগেই কল্পনা করা যেতো না। কিন্তু আমাদের আজকের ইউজ করা অনেক টেকের পেছনেই ছোটখাটো রহস্য লুকিয়ে রয়েছে যেগুলো অনেকেই আগে জানতেন না। যেমন- ল্যাপটপের চার্জারের পিনের কাছে ছোট কালো সিলিন্ডারের মতো ওইটা কি থাকে? স্মার্টফোন কিভাবে কেঁপে উঠে? বা হেডফোনের পিনে কোনটায় দুই দাগ আবার কোন পিনে তিন দাগ কেন থাকে?

ওয়েল, এই আর্টিকেলে এমনই কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে, যেগুলো আপনারা প্রত্যেকদিনই ব্যাবহার করছেন, কিন্তু এদের পেছনের লুকানো রহস্য গুলো আগে জানতেন না! তো আজ জেনে নেওয়া যাক।

ডোরাকাটা হেডফোন জ্যাক।


হেডফোন দৈনিক ইউজ করেন না, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যদিও অনেক কোম্পানি হেডফোনের জ্যাকের সিস্টেম পরিবর্তন করে দেওয়ার জন্য ফোন থেকে হেডফোন জ্যাকই সরিয়ে ফেলেছে। কিন্তু এখনো সবাই লম্বা পিন ওয়ালা জ্যাকই ইউজ করে। আর ফোন কোম্পানি গুলো তাদের ফোন থেকে সরাসরি জ্যাক সাপোর্ট সরিয়ে নিলেও এক বিশেষ ক্যাবল প্রদান করে যার ফলে এখনো রেগুলার হেডফোন জ্যাক সেখানে প্রবেশ করানো যায়।

আপনি যদি অনেকদিন ধরে হেডফোন ইউজ করে থাকেন, তাহলে নিশ্চয় খেয়াল করে থাকবেন হেডফোন মিনি জ্যাকে ডোরাকাটা থাকে। কোন হেডফোন জ্যাকে দুইটি ডোরাকাটা থাকে কোনটাকে তিনটা আর অনেক আগের হেডফোন জ্যাকে ১টা দাগ ছিল মাত্র! আপনি জাস্ট জ্যাক ফোনে ঢুকিয়ে গান শুনতে শুরু করেন, কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন এই ডোরাকাটা গুলো কিসের জন্য?

ওয়েল, এই ডোরাকাটা দাগ গুলো মূলত প্ল্যাস্টিকের হয়ে থাকে, এই দাগ গুলো দিয়ে হেডফোন জ্যাকের কানেকশন গুলো সেপারেট করানো হয়। হেডফোনের পিনে ০১টি মাত্র দাগ মানে হচ্ছে হেডফোনটি মনো সাউন্ড প্রদান করে, এর মানে হেডফোনে দুই স্পীকারে একই অডিও ইনপুট হয়। দুইটি ডোরাকাটা মানে হেডফোনটি স্টেরিও সাউন্ড সাপোর্ট করে, এরমানে হেডফোনটির ডান স্পীকার ও বাম স্পীকার দুইটি স্পীকারের অডিও আলাদা আলাদা!

আজকের বেশিরভাগ হেডফোনে ০৩টি ডোরাকাটা দাগ থাকে, এরমানে ঐ হেডফোনটি স্টেরিয়ো অডিও তো সাপোর্ট করেই সাথে এতে মাইক্রোফোন সাপোর্ট ও রয়েছে, এরমানে ঐ হেডফোনটি ইউজ করে আপনি ফোনে কথা বলতে পারবেন আর অডিও রেকর্ড করতে পারবেন! — অনেক সিম্পল ব্যাপার তাইনা? কিন্তু অনেকেই হয়তো এটা জানতেন না!

ল্যাপটপ চার্জার পিনের কাছে কালো সিলিন্ডারের মতো ঐটা কি?


শুধু ল্যাপটপ চার্জার নয় আগের ইউএসবি ক্যাবল আর ফোন চার্জারেও এই জিনিষ দেখতে পাওয়া যেতো। চার্জারের কানেক্টরের কাছে একটি কালো সিলিন্ডারের মতো জিনিষ লাগানো থাকে, কখনো চিন্তা করে দেখেছেন এটা কেন লাগানো থাকে? বা ঐটার আসল কাজটায় বা কি?

ঐ প্ল্যাস্টিকে আবদ্ধ কালো সিলিন্ডারটার নাম হচ্ছে ফেরাইট বিডস (Ferrite Bead) — এটা মূলত সকল ডিভাইজ থাকা আসা হাই ফ্রিকোয়েন্সি নয়েজ ইলেকট্রিক নয়েজ ব্লক করতে সাহায্য করে। যাতে এক ডিভাইজের সাথে আরেক ডিভাইজের মধ্যের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফেরেন্স না ঘটে।

আপনার ল্যাপটপ চার্জার বা ফোন চার্জার আপনার ডিভাইজকে রিচার্জ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু সেই ক্যাবল যদি আলাদা সিগন্যাল নয়েজ ক্যাপচার করতে শুরু করে তাহলে তো মুশকিল। প্রফেশনাল স্টুডিও মাইকের ইউএসবি ক্যাবলেও এই ফেরাইট বিডস লাগানো থাকে, যাতে রেকর্ডিং এর সময় কেবল অডিওই রেকর্ড হয়, আশেপাশের ওয়্যারলেস বা ইলেকট্রনিক সার্কিট নয়েজ যেন না ক্যাপচার হয়ে পারে। সার্কিট আসলে নানান পার্টসের একটি লুপ হয়ে থাকে যেটা কারেন্টের মধ্যে দিয়ে ইলেক্ট্রিসিটি প্রবাহিত করতে দেয়। অনেক সময় এই কারেন্ট প্রবাহের সময়ে এর আশেপাশে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হয়, আর অনেক সময় সেই ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড আপনার ক্যাবলটি রিসিভ করতে পারে।

ফেরাইট বিডস রেজিস্টরের মতো কাজ করে, মানে এটা ইলেকট্রিক এনার্জি শোষণ করে নেয় আর সেটাকে তাপে পরিণত করে। মানে ক্যাবল যে আলাদা সিগন্যাল গুলো রিসিভ করে সেটাকে ফেরাইট বিডস ফিল্টার করে তাপে পরিণত করে ছেড়ে দেয় আর সঠিক কারেন্ট চার্জার কানেক্টরে পৌছিয়ে দেয়! ব্যাপার গুলো একটু টেকনিক্যাল হয়ে গেলো যদিও, তারপরেও এখন আপনি জানলেন ঐ কালো সিলিন্ডারের কাজটা কি!

ইনফ্রারেড কোড

শুনতে অনেকটা হাইটেকি ব্যাপার স্যাপার বলে মনে হচ্ছে তাই না? অনেকটা গোপন রাশিয়ান আর্মি কমুনিকেশন কোডের মতো শুনতে রাইট? আসলে এই কোড ইউজ করে আপনার টিভি এবং টিভির রিমোট একে অপরের সাথে কথা বলে। শুধু টিভিই নয়, যে ডিভাইজ গুলোতে রিমোট কন্ট্রোল রয়েছে সেই ডিভাইজ গুলোই ইনফ্রারেড কোড ইউজ করে একে কথা বলে।

আপনি হয়তো আরামে রিমোট চেপে টিভি অন করেন তারপরে নানান কন্ট্রোল করতে থাকেন, কিন্তু আপনি জানতেনই না টিভি আর রিমোট এই বিশেষ কোড ইউজ করে কথা বলছে একে অন্যের সাথে। বেশিরভাগ রিমোট কন্ট্রোল, সাথে সম্ভবত আপনারটিও ইনফ্রারেড রেডিয়েশনের উপর কাজ করে। আপনার রিমোটটির উপরদিকে দেখলে একটি এলইডি বাল্ব দেখতে পাবেন, যা থেকে এই ইনফ্রারেড রেডিও তরঙ্গ বেড় হয়। আপনার হাতের রিমোটটি সাধারনত একটি ট্র্যান্সমিটার হয়ে থাকে এবং টিভিতে বা অন্য ডিভাইজে একটি রিসিভার লাগানো থাকে, যেটা রিমোট থেকে আসা ইনফ্রারেড সিগন্যালকে গ্রহন করে কাজ করে।

আপনার টিভির রিমোটে অন্তত ২০টির বেশি বাটন রয়েছে, তাই রিমোট কন্ট্রোলকে অবশ্যই এমনক্ষমতা সম্পন্ন হতে হবে যাতে এই প্রত্যেকটি বাটন প্রেস করাতে আলাদা সিগন্যাল উৎপন্ন করতে পারে এবং টিভি সেটাকে বুঝতে পারে। রিমোট কন্ট্রোলও কম্পিউটারের মতো বাইনারিতে কাজ করে। যখন আপনি রিমোটের কোন বাটন প্রেস করেন তখন এটি হয় অন অথবা অফ সিগন্যাল প্রেরন করে, যেখানে অন মানে ১ এবং অফ মানে ০। রিমোট একত্রে কিছু পালস সেন্ড করে এবং প্রত্যেকটি বাটনে আলাদা পদ্ধতিতে পালস সেন্ড করে।

ফোনে ভাইব্রেশন হয় কিভাবে?


ধরুন আপনার টেবিল ফ্যানের তিনটি পাখার মধ্যে একটি পাখা ভেঙ্গে গেছে, এই অবস্থায় টেবিল ফ্যানটি চালু করতে চাইলে সেটাতে প্রচণ্ড কম্পনের সৃষ্টি হবে এবং ফ্যানটি কাপতে কাপতে পরে যেতে পারে বা ভেঙ্গে ও যেতে পারে। একটি পাখা ভাঙ্গার ফলে ফ্যানে আর ভারসাম্য বজায় থাকে না!

ভারসাম্যহীন মোটর কিন্তু সবসময় অকাজের হয়ত না। আপনার প্রত্যেকদিনের ইউজ করা সেলফোনের মধ্যে কিন্তু এরকম অনেক ভারসাম্যহীন মোটর লাগানো থাকে। এই মোটর গুলো সাইজ পেন্সিলের মুখের চেয়ে একটু বড় আকারের হয়ে থাকে। আর মোটরের মুখে লাগানো থাকে অর্ধ গোলাকার আকারের কোন লোড, ফলে মোটরটি যখন অনেক জোরে ঘুরতে থাকে এর ভারসাম্যহীনতার জন্য ভাইব্রেশন তৈরি হয়।

হ্যাঁ, প্রত্যেকবার যখন আপনার ফোনে কল আসে,আপনার ফোনে নতুন কোন টেক্সট ম্যাসেজ আসে, বা যখনই যে কারণে ফোনে ভাইব্রেশন হোক না কেন সেটা ঘটে ফোনের মধ্যে থাকা ঐ ভারসাম্যহীন মোটর থেকে! কি? মজার ব্যাপার না? আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি এটা অনেকেই জানতেন না!

মোবাইল চার্জারের আজব কোড গুলো আসলে কি বুঝায়?


মোবাইল ফোন যখন প্রত্যেকদিন ইউজ করেন, নিশ্চয় সাথে মোবাইল চার্জার ও প্রত্যেকদিনই ইউজ করতে হয়! মোবাইল চার্জারে কখনো ভালোকরে লক্ষ্য করলে দেখবেন এর আগে আজব আজব সব কোড আর প্রতীক আঁকানো থাকে। এগুলো আসল মানেটা কি? কখনো প্রশ্ন করেছেন নিজেকে? আচ্ছা চলুন, উত্তর দিয়ে দেই!

প্রায় সকল চার্জারে এক ধরণের সার্টিফিকেশন মার্ক থাকে “CE” মার্ক, এর মার্কের মানে হচ্ছে এই চার্জারটি আপনি সমস্যা ছাড়ায় ইউজ করতে পারবেন আর এটা পরিক্ষিত। এর মানে এইটাই বুঝায় এটা আপনার স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, বা পরিবেশের কোন ক্ষতি করবে না। কোন প্রোডাক্ট সকল কোয়ালিটি টেস্ট পাস করার পরেই এতে “CE” মার্ক লাগানো হয়।

চার্জারে আরো লক্ষ্য করলে দেখবেন এতে ছোট একটি বাড়ির চিহ্ন দেওয়া আছে, এর মানে হচ্ছেএই ডিভাইজটি শুধু মাত্র বাড়িতে ইউজ করার জন্য উপযুক্ত! এরপরে দেখবেন চার্জারে ডাবল বর্গক্ষেত্র সাইন রয়েছে, এরমানে হচ্ছে আপনার এই ডিভাইজটিতে ডাবল অন্তরণ প্রোটেকশন রয়েছে মানে এই ডিভাইজ থেকে ইলেকট্রিক শক পাওয়া থেকে আপনি ঠিকঠাকভাবে নিরাপদ।

আবার দেখবেন চার্জারের আগে রিসাইকেল সাইনের উপরে ক্রস সাইন মারা থাকে, এরমানে হচ্ছে ডিভাইজটি সঠিকভাবে রিসাইকেল করতে হবে। জাস্ট সেটাকে রিসাইকেল ট্র্যাসে ফেলে দেওয়া যাবে না, এতে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া আপনার চার্জারে “V” দেখতে পাওয়া যায়, এটা কোন দেশের জন্য উপযুক্ত সেটা নির্দেশ করানো হয়। যদি “IV” সাইন সাথে এর মানে এটা ইউএস এর জন্য, যদি “V” সাইন থাকে সেটা ইউরোপে ও ইউজ করা যাবে!

তো এই ছিল কিছু দৈনন্দিন ব্যবহৃত জিনিসের ছোট বড় গোপন ব্যাপার যেগুলো হয়তো আগে কখনো চিন্তাই করে দেখেননি! এই লিস্টে আরো কিছু যুক্ত করতে চাইলে নিচে কমেন্ট করতে পারেন। সাথে কোন গোপন রহস্য জেনে বেশি চমৎকৃত হয়েছেন সেগুলো নিচে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!

তাহলে আজকে এই পর্যন্ত অসংখ্য ধন্যবাদ কষ্ট করে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য।

আশা করি আজকের এই পোস্ট টি সবারই অনেক উপকারে আসবে।  সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, নিরাপদ থাকবেন Sobuz Bangla TV এর সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।

সবুজ বাংলা টিভি ইউটিউব চ্যানেল লিংক:-

https://www.youtube.com/c/SobuzBanglaTV2019 

Image: Shutterstock

৩টি মন্তব্য:

Goldmund থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.