হ্যাকিং শিখতে চাওয়ার আগে, যে বিষয়গুলো আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে?

হ্যাকিং শিখতে চাওয়ার আগে, যে বিষয়গুলো আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে?


হ্যাকার এবং হকার ভাই এবং বন্ধুরা আপনাদেরকে সকলকে বলছি আজকের এই লেখাটি আমার মনোভাবেরই প্রতিফলন, তাই সম্পূর্ণ পড়ে দেখার অনুরোধ করলাম। আজকের এই পোস্টটি যারা বড় মনে করে পড়বেন না, তারা জীবনে অনেক কিছুই মিস করবেন, তাই অনুগ্রহ করে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার চেষ্টা করুন এবং আমার বলা কথাগুলো কে বোঝার চেষ্টা করুন।

হ্যাকিং শব্দটা বোধহয় এই পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে বেশি আলোচিত। তা কতটা সেটা হ্যাকিংয়ের সাথে যারা জড়িত তারা হয়তো বুঝতে পারেন।
যারা সারাদিন হ্যাকিং শিখবো, হ্যাকিং শিখবো বলে রীতিমত মুখে ফেনা তুলেন, তারা লজ্জা কি জিনিস তা ভুলে হ্যাকিং শেখার নেশায় নিজের অজান্তেই অন্যের গোলাম বনে যান, যার তার কথায় যে কোন একাউন্টে রিপোর্টিং করেন, আবার অন্যের সম্পর্কে কিছুই না জেনে তাকে গালমন্দ করেন এইসব হ্যাকিং শিখতে চাওয়া নতুন হকাররা। অনেক জঘন্য কাজ করতেও কারো আপত্তি নাই, কারন তারা শুধু একটি জিনিসই দিবা স্বপ্ন দেখেন কেউ এসে তাদের ফ্রিতে সব হ্যাকিং শিখিয়ে যাবেন।
তাদের জন্য করুণা ছাড়া আমার আর কিছুই নাই। কারণ হ্যাকিং বাস্তবতা এটা না, হ্যাকিং কোনো ছেলে খেলা না, সিলেবাসের কোনো অংশ না, কোনো লিমিট নেই হ্যাকিং শিক্ষার। হ্যাকিং হলো ক্রিয়েটিভি। যার যত মেধা সে তত ভাল হ্যাকার হতে পারেন। কিন্তু পরীক্ষায় ফেল করা, ডিম পাওয়া স্টুডেন্ট যারা মুখস্থ বা কপি করে পাস করেন, তারা কখোনই হ্যাকার হতে পারে না।
এখানে মেধার ব্যাপারটা মাথায় রাখা উচিত। এমন না যে, কুদ্দুস সাহেব যিনি রিকশা চালান তার হঠাৎ ইচ্ছা হলো উনি হ্যাকিং শিখবেন। আর এর ওর ইনবক্সে মেসেজ দিলেন, আর হ্যাকিং শিখিয়েও দিলো। বর্তমানে মনে হয় এরকম ঘটনা ঘটে। কোনো লেভেল নাই, কোন সীমাবদ্ধতা নাই। যার ইচ্ছা হয় সেই একটা ফেসবুক আইডি খুলেই হ্যাকার হয়ে যেতে চান।
ঠিক আগে যেমন বাংলা ছবির নায়কের ঢিশুম ঢিশুম ঘুষি দিতে দেখে অনেকেই সিনেমার নায়ক হতে চাইতেন। কিন্তু তা কখনোই সম্ভব হয় না। কিন্তু এখন একটা ফেসবুক আইডি থাকলেই হয়, সে কোনমতে একটি ফেসবুক একাউন্ট এবং একটি ফেসবুক গ্রুপ বা পেজ খুলেই হ্যাকার হয়ে যায়।
বাস্তবতা ভিন্ন, হ্যাকিং সাধনার ব্যাপার। এটা একটা বিশাল জগৎ। এখানে কিছু করতে গেলে তার আগে প্লাটফর্মে দাঁড়াতে হবে, বেসিক জ্ঞান নিতে হবে, প্রোগ্রামিং শিখতে হবে, অনেস্টলি বলছি, যারা কম্পিউটারে পড়াশোনা করেন তাদের অধিকাংশই প্রোগ্রামিং সি তে কাঁচা বা পারেন না। কোনো মতে পাস করেন। বেশিরভাগ ফেইলও করেন। এটা আমার অভিজ্ঞতা।
প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ যেখানে একজন কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র বুঝতে দিনের পর দিন পার করে, কোনো রকমে পাস করে, সেখানে একেবারে নতুন আসা ব্যক্তিরা কিভাবে কোনো প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ বা অন্য কোন অ্যাপ্লিকেশন শিখবে সেটা অনেক ভাবার বিষয়? কারন এটা তাদের কাছে স্রেফ মঙ্গল গ্রহের ভাষা বলে মনে হবে।
হ্যাকিংয়ের চিন্তা তো তখন চীনের দূরত্বে। প্লিজ আগে হ্যাকিং জিনিসটা কি সেটা জানার এবং বুঝার চেষ্টা করুন। হ্যাকিং এর জন্য কি কি শিখতে হবে, সে সব বিষয়গুলো আপনি অদৌ শিখতে পারবেন কিনা? এ জিনিসগুলো একটু মাথায় রেখে তারপর হ্যাকিং শিখবেন কিনা সেটা আপনাদের ভাবা উচিত?
যারা হ্যাকিং শিখবেন করে করে মুখে ফেনা তুলে যাচ্ছেন, এর ওর প্রোফাইলে গিয়ে নক দিচ্ছেন ভাই প্লিজ হ্যাকিং শিখান, তাদের প্রতি আমার কয়েকটা প্রশ্ন- হ্যাকিং শিখে কি করবেন? আপনার আল্টিমেট গোল কি? এটা শিখে আপনি কি করতে চান? আপনার কোন উপকার হবে? লাভবান হবেন নাকি সময় নষ্ট করবেন? হ্যাকিং করে আপনি কি আর্ন করতে পারবেন? হ্যাকিং কি আপনার কোনো কাজে আসবে ভবিষ্যতে?
যদি নাই আসে তাহলে স্ট্রিক্টলি বলবো, এই হ্যাকিং চর্চার চিন্তা আপনারা বাদ দিন। শুধু শুধু সময় নষ্ট করবেন না। মনে রাখবেন জীবনে সময়ের মূল্য অনেক বেশি। যা করে আপনার কোনো কাজে আসবে না, তা করতে যাবেন না। আর যদি মনে করেন হ্যাকিং শিখে কারো ক্রেডিট কার্ড মেরে দিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা কামাবেন, ধান্দা করবেন হ্যাকিংয়ের নাম করে। তাহলে ওয়েলকাম। সেক্ষেত্রে লাল দালানের কথাটাও মাথায় রাখা উচিত।
আর যদি আপনার উত্তর হয় এরকম, না ভাই আমি হ্যাকিং শিখে দেশের উপকার করব। তাদের বলব দেশের উপকার করার জন্য অনেকেই আছে। দেশে হাজার হাজার আইটি স্পেশালিস্ট আছেন। দেশের সেবা করার জন্য অনেকেই রাত দিন খেটে, খেয়ে না খেয়ে কাজ করার যোগ্য মানুষ আছেন। আগে নিজে কি কারণে এই জগতে পা বাড়াতে চান সেটা নিজের কাছে ক্লিয়ার হয়ে নিন।
আর দুয়েকটা সাইট ডিফেস দিলেই সেটা দেশের কোনো উপকারে আসে না। আগে চিন্তা করুন হ্যাকিংটা আসলেই আপনার জীবনে কোনো ফল বয়ে আনবে কিনা? না আনলে হ্যাকিংয়ের চিন্তাটা মাথা থেকে বাদ দিতে পারেন।
আর বাদ না দিলে যা হবে-
# যে কেউ আপনাকে নিয়ে ছেলে খেলা করবে।
# যে কেউ মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপনাকে দিয়ে তাদের ব্যক্তিগত সার্থ উদ্ধার করবে।
# কারো টাইম লাইনে হ্যাকার পরিচয় দেখে তাকে মেসেজ দিয়ে বিরক্ত করবেন।
# উত্তর না পেলে গালি দিয়ে চলে যাবেন।
# ভাগ্যক্রমে কোনো দিন কোনো রকমে এসকিউএল এর কিছু সিনট্যাক্স মুখস্থ করবেন।
# একটা সাইট ইঞ্জেক্ট করবেন (ধরে নিলাম)।
# একটা সাইট ডিফেস দি্বেন (ধরে নিলাম)।
শুরু হবে আপনাদের ভাব নেওয়া, আপনারা ভাবতে শুরু করে দেবেন আমি হ্যাকিং জগতের সব শিখে গেছি, আমি এখন বিশাল হ্যাকার। নামের পাশে হ্যাকার লাগাই রাখবেন। খুব অহংকার চলে আসবে মনে । কোন রেস্পেক্টেড ব্যাক্তিকেও তখন সম্মান দিতে পারবেন না। কারণ তখন আপনি নিজেকে অন্য গ্রহের প্রাণী ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন।
আর আপনার এই ধরনের আচরণের কারণে আপনার প্রতি অন্যদের প্রতিক্রিয়া হবে, অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্কর, অল্প পানির মাছ লাফাই বেশি । ল্যামার পরিচিতি। কারন এই ধরনের মানুষগুলোকে কেউ গোনায়ই ধরবে না। সো প্লিজ। শুধু হ্যাকিং হ্যাকিং করে নিজের মাথা নিজে নষ্ট করবেন না, অন্যদের ও না।
তবে হ্যাঁ, আপনার ভবিষ্যৎ কোনো পরিকল্পনা বা আপনি যদি আইটি বিষয়ে পড়াশোনা করেন, ভালো প্রোগ্রামার হওয়ার স্বপ্ন থাকে, কোনো সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট হতে চান, আর এর মধ্যেই আপনার ক্যারিয়ার বিল্ডআপ করতে চান, তাহলে আপনি হ্যাকিংকে আপনি আপন নিতে পারেন। কারণ আপনার ক্যারিয়ারে এই নলেজগুলো কাজে আসবে। তবে সব না, কিছু কিছু।
যদি আপনি অনলাইনে ফ্রীলান্সারদের মত কাজ করেন, তাহলে হ্যাকিং আপনার খুব বেশি কাজে আসবেনা। যদি ওয়েব বেইসড এপ্লিকেশনে কাজ করেন, তাহলে হ্যাকিং এর মধ্যে কিছু জিনিস কাজে আসবে। আপনি যদি আইটি লাইনে পড়াশোনা করেন, ক্যারিয়ার গড়েন তাহলে হ্যাকিং শিখার আগে মিনিমাম রিকোয়ারমেন্টস গুলো আপনার রপ্ত করতে হবে। হ্যাকিং শিখতে পারেন, আর না পারেন, কিছু নতুন জিনিস জ্ঞান ভান্ডারে যোগ হলে মন্দ না। এর জন্য অন্যকে নক না করেও অনেক কিছু শিখতে পারেন, যদি আপনারা সঠিকভাবে সঠিক নিয়মে গুগলকে ব্যবহার করতে জানেন।
কিন্তু অতীব দুঃখের সাথে বলতে হয় যারা হ্যাকিং শিখতে আসেন তাদের বেশির ভাগ মানুষই গুগল কি সেটাই জানে না। অল্প বিদ্যা নিয়ে কখনই বাহাদুরী করবেন না। মনে রাখবেন চার দেয়ালের মাঝে বন্দি আপনি। আর বিশাল দুনিয়া পড়ে আছে যা আপনার কল্পনাতেও নেই কি হচ্ছে সেখানে, কেমন ফাস্ট অন্যরা। তাই বিনয়ী হতে শিখুন। অন্যের কাছ থেকে যা কিছু শিখবেন, তা নিজের নামে চালানোর আগে একটু সুস্থ মত চিন্তাভাবনা করবেন, এবং যদি অন্যজনের কোন কিছু নিজের নামে চালাতেই হয় তাহলে তাকে জানিয়ে, অথবা তাকে যদি নাও জানান, তার পরও তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিয়ে কাজ করার চিন্তাভাবনা করবেন।
তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যা হচ্ছে সেটা খুব দুঃখজনক। লক্ষ্য করলে দেখা যায় বয়সে অনেক ছোট, ক্লাস ০৬ - ১০ এ পড়ুয়াদের মধ্যে এই হ্যাকিং ঝোঁকটা অতি বেশি, যাদের মধ্যে ম্যাচুরিটি জিনিসটা আসেনি। তাই তারা কাউকে তার যোগ্য সম্মান দিতে পারে না। তবে এর উপরের লেভেলেও অনেকেই আছেন, যারা কিনা নিজেকে বড় করে দেখাতেই ব্যস্ত।
অত্যন্ত কষ্টের বিষয় কি জানেন বর্তমানে কেউ কষ্ট করে প্রোগ্রামিং ভাষা বা হ্যাকিং সম্পর্কিত বিষয়বস্তু শিখতে চায় না, সবাই শর্টকার্ট পদ্ধতিতে ০১ দিনেই হ্যাকার হতে চায়। তারা যদি একবার বুঝতে পারতো এই হ্যাকিং ব্যাপারটা আসলে কোন ছেলে খেলা না।
হ্যাকিং অনেক সাধনার ব্যাপার, দুয়েকটা ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে শিখার বিষয় না এটা। বা কোনো একটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যাবহার করেও শেখার বিষয় না। হ্যাকিং শিক্ষার জন্য বেসিক বিষয় গুলো শিখতেই হয়ত বছর পার হয়ে যাবে, সারাদিন পিসিতে বসে প্র্যাক্টিস করতে হবে।
আজকের এই পোস্ট টাতে এখন পর্যন্ত এতো কিছু পড়ার পরে মনে হয় না খুব বেশি কেউ আর আমার এই কথা গুলোর প্রতি ইন্টারেস্টেড হবে। অনেকে আবার মনে মনে বলতেও পারে তুই ব্যাটা অনেক বেশি কথা বলিস।
কারণ কেউ কষ্ট করতে রাজি না। সবাই ০৩ দিনে হ্যাকার হতে চায়। তাই তো আজ বাংলার আকাশে, বাতাসে, অলিতে-গলিতে পথের মোড়ে হ্যাকার আর হ্যাকার। কিছুদিন আগেও যেখানে হ্যাকারের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা আজ সেখানে রাস্তাঘাটে পায়ে পায়ে বাড়ি খায় এত হ্যাকার পাওয়া যায়। তবে এরা কিন্তু হ্যাকার নামে হকার আরকি।
অথচ যারা এই হ্যাকিং সেক্টরে কাজ করেন, যারা অনেক বেশি জানেন, যারা প্রকৃত লীড তাদের কেউ চিনে না পর্যন্ত। শাহী মির্জা ভাইকে কয় জন চেনে? তারেক ভাই বা ফয়সাল ভাইকে কয়জনে চিনে বলতে পারেন? তাদের কোনো শো অফ নাই বলে তারা চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছেন। তারাই হলো সম্মানের পাত্র।
একটা কথা মনে রাখবেন, যারা প্রকৃত হ্যাকার তারা কোনো দিন শো অফ করেন না, তারা কোনো অহংকার দেখান না, তারা বিনয়ী কারণ তারা বিশালতা সম্পর্কে জানে। তারা যা জানেন তাতে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না, আরো শিখতে চান।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি সাইবার স্পেসে নতুন এসেছে তারা এখন শো অফ করে আর সবাই ভাবে তারা কি না কি! আবার অনেক গণ্ডমূর্খ রা তাদের পা চাটাও শুরু করে। আর সেই সব হ্যাকার নামের হকার ব্যাক্তিবর্গও ভাব নিতে থাকেন।
আর পর্দার আড়ালে আসল মানুষগুলো নিজ পরিচয় গোপন করে কাজ করে যান দিনের পর দিন। আর হ্যাকার নামের হকার সুবিধাবাদীরা অন্যদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে হিরো হয়ে যান।
হয়ত এটাই নিয়ম। পর্দার আড়ালের মানুষগুলো এভাবেই নীরবে কাজ করে যান আর অল্পবিদ্যাবিদদের দৌড় ঝাঁপ চলতেই থাকে।
আমার এই কথাগুলোতে আপনারা কেউ মনে কষ্ট পাবেন না। আমি বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী নির্মম সত্য এবং বাস্তব কথা গুলোই এই পোস্টে তুলে ধরেছি। তাই কেউ যদি আমার এই কথাগুলোতে অনিচ্ছাকৃত ভাবে কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে আমি সকলের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিতো এবং ক্ষমাপ্রার্থী। আর যদি মনে করেন যে না আপনাদের এই সবুজ ভাই কথাগুলো যা বলেছে তার যথার্থ এবং বাস্তব কথা বলেছে, তাহলে আপনারা সব সময় আমার সাথে থাকুন, পাশে থাকুন আর এই সবুজ বাংলা সাইবার আর্মি গ্রুপটাকে আপনাদের নিজস্ব গ্রুপ মনে করে প্রত্যেকটা পোস্ট সর্বোচ্চ শেয়ার করার চেষ্টা করুন, এবং সবুজ বাংলা ইউটিউব চ্যানেলটাকে সাবস্ক্রাইব করে সাথে থাকুন পাশে থাকুন।
সবুজ বাংলা টিভি ইউটিউব চ্যানেল লিংক :- https://youtube.com/c/SobuzBanglaTV2019

1 টি মন্তব্য:

Goldmund থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.